নওগাঁর ৮টি স্থানে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত
টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁয় আত্রাই নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির তোড়ে আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আটটি স্থান ভেঙে গেছে। বন্যার পানিতে জেলার রাণীনগর, আত্রাই, মান্দা, পত্নীতলা, বদলগাছী, ও ধামইরহাট উপজেলায় তলিয়ে গেছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। এতে প্রায় ৫০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মান্দায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নওগাঁ শহর রক্ষা বাঁধ এবং বাঁধের আউটলেট (নদী থেকে পানি বের করে দেয়ার নালা) উপচে নওগাঁ শহরের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল থেকে সোমবার দুপুরের মধ্যে পাউবো তীর সংরক্ষণ বাঁধের আটটি স্থান ভেঙে যায়। উপজেলার বুড়িদহ সুজনসখির ঘাট, শহরবাড়ী, চকবালু, কয়লাবাড়ি, দারিয়াপুর, চকরামপুর পার নুরুল্যাবাদ, নুরুল্যাবাদ উত্তরপাড়া ও কয়াপাড়া কলেজমোড় এলাকায় আত্রাই নদীর বাঁধ ভেঙে উপজেলার প্রসাদপুর, নুরুল্যাবাদ, মান্দা সদর, বিষ্ণুপুর, কশব, পরানপুর, কালিকাপুর ও তেতুলিয়া ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। ভেসে গেছে লাখ-লাখ টাকার মাছ। বাঁধের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় সোমবার সকাল থেকে জেলার আত্রাই উপজেলার সঙ্গে মান্দার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার, ধামইরহাট উপজেলার শিমুলতলী আত্রাই নদীর পানি ১৭০ সেন্টিমিটার, মান্দায় আত্রাই নদীর পানি ১১১ সেন্টিমিটার এবং আত্রাই উপজেলার আত্রাই নদীর পানি ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বর্তমানে অসহায় পরিবারগুলো বিশ্ববাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। সোমবার পর্যন্ত কোনো সরকারি সাহায্য বা ত্রাণ তাদের কাছে না পৌঁছায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে তারা। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ওঠায় সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফসলের খেত ডুবে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
মান্দা উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, বন্যা নিন্ত্রয়ণ বেড়ি বাঁধ রোববার ভেঙে যাওয়া এলাকায় পানি প্রবেশ করে। পানি বাড়তে থাকায় বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমার বাড়িটি পানিতে ডুবে গেছে। এখন সবাইকে নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করতে হচ্ছে।
মান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ইতিমধ্যে প্লাবিত এলাকার মানুষের জন্য ২৫ হাজার টাকা ও ৫ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, রোববার পর্যন্ত জেলায় আউশ ও আমনসহ বিভিন্ন ফসলি জমির প্রায় ৮ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমি পানির নিচে ছিল। পানি বৃদ্ধি পেয়ে অনেক স্থানে রাস্তার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া বাঁধ ভেঙে গিয়ে সোমবার পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আমিনুর রহমান বলেন, বন্যার কারণে দুই উপজেলার ২২টি বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পানি নেমে গেলে আবারও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়াও বন্যার কারণে কেউ যদি স্কুলে আশ্রয় নিতে চায় নিতে পারে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অনুমতি দেয়া আছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীতে পানির চাপ থাকায় বন্য নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বন্যাকবলিতদের খোঁজখবর রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহযোগিতা করা হবে।
আব্বাস আলী/আরএআর/পিআর