তিস্তায় রেড অ্যালার্ট, ৮টি বাঁধ বিধ্বস্ত
উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে গর্জে উঠেছে তিস্তা। রুদ্রমূর্তি ধারণ করে সব কিছু কাঁপিয়ে দিয়ে চলেছে। ফলে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে তিস্তা অববাহিকা।
উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের ৫৪টি গেট খুলে দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তিস্তা নদীর আগাম উজানের ঢলের খবরে গত শনিবার রাত ১০টায় রেড অ্যালার্ট জারি করে তিস্তা অববাহিকায়। তিস্তা নদী বন্যাসহ এ জেলার ৬ উপজেলার অবিরাম বর্ষণে ৫০ হাজার পবিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রোববার সকাল ৬টা হতে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারী ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০) ৬৫ সেন্টিমিটার (৫৩ দশমিক ০৫) উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বিকেল ৩টায় উজানের ঢল কমে আসায় নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এতে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
উজানের ঢলে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ থর থর করে কাঁপতে থাকে। ফলে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা সকাল সাড়ে ৯টায় ফ্লাড বাইপাস ওপেন করতে গেলে লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলা এলাকার মানুষজনের বাধার সম্মুখিন হয়ে তা ওপেন করতে পারেনি।
ফ্লাড বাইপাস ওপেন করতে না পারার কারণে তিস্তা ব্যারাজ রয়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে। এ ছাড়া ব্যারাজের উজানের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন এখন লণ্ডভণ্ড হচ্ছে। এতে পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে নদীর ঢল। এরমধ্যে বসতঘর উড়িয়ে নিয়ে যায় পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ১৪টি, খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ৬টি, টেপাখড়িবাড়ী ৩১টি, খালিশা চাপানিতে ২৫টি ও ঝুনাগাছ চাপানি ২৪টি।
এ ছাড়া কয়েক হাজার মানুষজনকে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ নিরাপদস্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
পানির প্রবাহ বেশি হওয়ায় ডালিয়া ব্যারেজ হুমকির মুখে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃপক্ষ। তবে সকাল সাড়ে ৯টায় পাউবো কর্তৃপক্ষ ব্যারেজ সংলগ্ন ফ্লাড বাইপাসটি কেটে দিতে গেলে স্থানীয় লোকজনের বাঁধার মুখে কাটতে পারেনি। ঘটনাস্থলে রংপুর সার্কেল-২ তত্ত্বাবধায় প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ নিশ্চিত করে বলেন, সেখানে আনসার ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
লালমনিরহাট থেকে অতিরিক্ত পুলিশ চাওয়া হয়েছে পুলিশ আসলে ফ্লাড বাইপাসটি ওপেন করা হবে। তিস্তা নদী বিধৌত ডিমলা উপজেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যা দুর্গত ক্যাম্প চালু করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহম্মদ খালেদ রহীম জানান, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর বন্যা ও টানা বৃষ্টিতে জেলাজুড়ে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষজনের জন্য রোববার ১৮০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ঢাকায় আরও ১০ লাখ টাকা ২শ ২৫ মেট্রিক টন চাল ও ৫ হাজার শুকনা খাবারের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, ভয়াবহ উজানের ঢলে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেও সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
একদিকে তিস্তা নদী ছাড়াও বুড়িতিস্তা, নাউতরা, কুমলাই নদীর কারণে শত শত হেক্টর আবাদী জমির ফসল গত ৫দিন থেকে হাটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
জাহেদুল ইসলাম/এমএএস/আরআইপি