সব হারিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন তারা
তিনদিনের ভারি বর্ষণে দিনাজপুরের প্রধান নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত দুদিনে ৪৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
যা গত ১০ বছরের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছে। বন্যার পানিতে ৪০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সব হারিয়ে এবার নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন তারা।
পাশাপাশি জেলায় চারটি স্থানের শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে ফসলি জমিসহ বিভিন্ন জিনিসের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মাহুতপাড়ায় বাঁধ ভেঙে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেই সেঙ্গ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ভারি বর্ষণ ও ভারতের বাঁধ খুলে দেয়ায় দিনাজপুর সদরের মাহুদপাড়া ও সুন্দরা এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে শহরের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। চিরিরবন্দর ও বিরল উপজেলায়ও বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে বিজিবির সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
অপরদিকে ভারি বর্ষণে দিনাজপুরের ১৩ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে শত শত কাঁচা বাড়িঘর। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে মহাসড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছে বন্যাকবলিত মানুষ।
বন্যার ফলে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বন্যার ফলে সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তাঘাট ডুবে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার সাত ইউনিয়নের প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বিরল উপজেলার পুনর্ভবা নদীর ভাঙনে উপজেলার রাজারামপুর, আজিমপুর, ফারাক্কাবাদ ও ধামইর ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আত্রাই নদীর বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে প্রায় ১০টি গ্রাাম।
পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয়স্থল খোলা হয়েছে। সেগুলো তদারকি করছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি উদ্ধার কাজের জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদের তলব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম।
তিনি জানান, পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ও প্রশিক্ষিত বাহিনী না থাকায় সেনাবাহিনী তলব করা হয়েছে।
এদিকে ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণে কাজ করা হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।
তিনি জানান, পুনর্ভবা ও আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার করতোয়া, ঢেপা, ছোট যমুনাসহ অন্যান্য নদীর একই চিত্র। এতে জেলার বেশ কিছু এলাকায় পানি ঢুকে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। ফলে ওইসব এলাকার মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের লোকজন গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাওয়ার সঙ্কট।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, অবিরাম বৃষ্টিতে দিনাজপুরে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির আমন চারা ও বেশকিছু পুকুর ডুবে গেছে। এতে মৎস্য চাষিদের বেশ ক্ষতি হয়েছে।
এমদাদুল হক মিলন/এএম/পিআর