চিন্তা বাড়াচ্ছে ভারতীয় গরু
কোরবানি উপলক্ষে নওগাঁয় প্রায় ৩ লাখ পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ভারত থেকে গরু আশায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা। পরপর কয়েকবার ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশের কারণে খামারি ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়েছিল। তারপরও তারা হাল ছাড়েনি। গতবার ভালো দাম পাওয়ায় এবার কোরবানির পশুর পরিচর্যায় সময় ব্যয় করছেন। কিন্তু ভারত থেকে পশু আমদানি হওয়ায় এ বছরও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন খামারিরা।
বেকারত্বের অভিশাপ ঘোঁচাতে, আবার কেউ সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে গড়ে তুলেছেন খামার। কোরবানিতে দেশি জাতের ও শংকর গরুর চাহিদা থাকে বেশি। ফলে খামারিরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করেছেন। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লালন পালন করতে গিয়ে খামারি ও কৃষকদের খরচ বেশি হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ খামারিদের গো-চারণ ভূমি না থাকায় সবকিছু কিনে খাওয়ানোর উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু কোরবানি সামনে রেখে পশুখাদ্যের দামও বেড়েছে বাজারে।
খামারিরা জানান, ঈদকে সামনে রেখে পশুখাদ্যের দাম বাড়ার কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গরুগুলোকে প্রতিদিন দু’বার খড়, খৈল, ময়দা, গুড়ো চাউল, ভুষিসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির খাবার দিতে হয়। গো-খাদ্যের দাম বেশি হলেও ঈদের বাজারে লাভবান হওয়ার আশায় পশু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৪৫৬টি খামারে পশু মোটাতাজাকরণের লক্ষ্যে ১৪ হাজার ৯৫১ জন খামারি রয়েছেন। এবার ঈদে জেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা প্রায় ১ লাখ ১০ হাজারটি। হৃষ্টপুষ্ট করে প্রায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫১টি পশু কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় ৭১ হাজার ৯৩২টি, বলদ ৩৩ হাজার ৯৫টি, গাভী ৩৬ হাজার ৯৮০টি, ছাগল ৯৩ হাজার ৫৯৯টি, ভেড়া ৩৪ হাজার ৩৯৮টি এবং অন্যান্য পশু ১ হাজার ৪৬৭টি।
সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের উল্লাসপুর-মশরপুর গরু মোটাতাজাকরণ ফার্ম সিআইজি। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রজেক্ট (এনএটিপি-২)। এই ফার্মের মালিক নিপেন্দ্র কুমার মজুমদার বলেন, গত ৬ মাস আগে ৮০টি গরু নিয়ে এই ফার্মের কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে।
ফার্মটি এলাকায় ব্যপক সাড়া ফেলেছে। কারণ এবার একটি নতুন পদ্ধতি চালু করেছি। কোরবানির সময় যাদের বাড়িতে গরু রাখার সমস্যা ঈদের আগের দিন তাদেরকে সরবরাহ করা হবে। এতে ক্রেতারাও গরু কিনতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন। খামার থেকে গরু কিনলে দালাল বা ফড়িয়ার চক্রে পড়তে হয় না। আগামীতে ফার্মে প্রায় ৩০০ গরু মোটাতাজাকরণ করা হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
নওগাঁ শহরের দফতরি পাড়ায় গত তিন বছর থেকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত ফার্মে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন খামারি ইফতেখারুল ইসলাম সজিব। তিনি বলেন, এবার কোরবানি উপলক্ষে দেশীয় ও শংকর জাতের প্রায় শতাধিক গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। ৬ মাস আগে থেকে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ থাকায় দেশীয় প্রতিটি গরু ৫০-৬০ হাজার টাকা করে কিনতে হয়েছে। এতোদিন লালন পালনের পর এখন সেসব গরু প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দাম হয়েছে বলে জানান বেপারিরা।
তিনি বলেন, কিন্তু গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু খাবারের খরচটাও বেশি হচ্ছে। এছাড়া হঠাৎ করে ভারত থেকে গরু আমদানি হওয়ায় দেশীয় গরুর দাম কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত খামার থেকে কোনো গরু বিক্রি করতে পারিনি। এ বছর লোকসান গুনতে হবে দেখে দুশ্চিন্তায় ও হাতাশার মধ্যে আছি।
নওগাঁ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা উত্তোম কুমার দাস বলেন, পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার পর্যায়ে সারা বছরব্যাপী একটা কর্মসূচি। তবে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে এর কার্যক্রম আরো জোরদার হয়েছে এবং খামারিদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দিপনা আরো বৃদ্ধি পায়। এ বছর প্রায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫১ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাকিগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে।
আব্বাস আলী/এফএ/আইআই