সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, দেখা নেই নদীতে
বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এবার প্রথম দফায় অনেক ট্রলার মালিক তাদের বিগত দিনের লোকসানের বোঝা ঝেড়ে পুষিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও সাগর থেকে উঠে আসা উপকূলীয় নদ-নদীতে ইলিশের দেখা নেই। এ নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে স্থনীয় জেলেদের মাঝে।
এসব জেলেরা অনেক কষ্টে ইলিশ মৌসুমের শুরুতে ধার দেনা করে ট্রলার ও জালসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম সংগ্রহ করেন। কিন্তু শিকারে নেমে মাছ না পেয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন জেলে পরিবারগুলো। স্থানীয় নদীতে এখনো ইলিশের দেখা না মেলায় উদ্বিগ্ন দাদন ব্যবসায়ীরাও। ইলিশ মৌসুমের আগে নৌকা, ট্রলার ও জালসহ মাছ শিকারের নানান সরঞ্জাম কেনার জন্য জেলেদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে থাকেন এসব দাদন ব্যবসায়ীরা।
পিরোজপুর জেলাসহ উপকূলীয় এলাকায় শত শত মিনি আড়ৎ মালিক রয়েছেন। দাদন ব্যবসায়ীরা নদ-নদীর পাশের হাট বাজার অথবা তাদের সুবিধা মতো স্থানে ঘর তুলে নিজ নিজ দেনাদার জেলেদের ধরা মাছ কিনে থাকেন। দাদন নেয়া জেলেরা যে যার কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেবেন তাকেই তার মাছ দিতে হবে। ওই জেলে অন্য কোথাও মাছ বিক্রি করতে পারবে না। আড়ৎদারদের বেধে দেওয়া দামেই তার মাছ বিক্রি করতে হবে।
জেলে আবুয়াল বাশার বাদশা আকন বলেন, এখন পর্যন্ত কচা নদীতে ইলিশের দেখা নেই। দিন রাতে তিন চার বার নদীতে জাল পেতে দু-চারটি ইলিশ পাওয়া গেলেও খরচের পর যা থাকে তা দিয়ে সংসার চালাতে হিম শিম খাচ্ছি।
তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমরা আগে কখনো শুনিনি বা দেখিনি যে সাগরে মাছ হলে স্থানীয় নদীতে হয় না। আশায় বুক বেধে ছিলাম সাগরে মাছ হয়েছে এখন নদীতেও মাছ হবে। একই অবস্থা পিরোজপুরের বলেশ্বর, কালীগঙ্গা, সন্ধ্যা ও পোনা নদীতেও। নদীতে জাল ফেলে মাছ না পেয়ে শূন্য হাতে জেলেদের বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
কচা নদীর চরখালী ফেরিঘাটের মেসার্স মায়ের দোয়া ফিস নামের আড়তের মালিক মো. মামুন মাঝি বলেন, কচা নদীর ২৫ জন জেলেকে ইলিশ মৌসুমে দাদন দিয়েছি। এ বছর এখন পর্যন্ত যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে এ মৌসুমে জেলেরা টাকা পরিশোধ করতে পারবে না।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা লাভতো দূরের কথা বর্তমানে ধার দেনা করে সংসার চালাচ্ছেন।
অপরদিকে ভিন্ন চিত্র জেলার মৎস্য বন্দরের আড়ৎ, ফিশিং ট্রলার মালিক, মাঝি ও জেলেদের বাড়িতে। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে ঈদ আনন্দ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরগরম মৎস্য বন্দরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জেলেদের পদচারণায় মুখর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।
সকালে আড়তের বিক্রেতাদের হাঁক ডাকে ঘুম ভাঙে বাজার ব্যবসায়ীদের। প্রতিদিন সাগর থেকে মাছ নিয়ে বন্দরে আসছে ফিশিং ট্রলারগুলো। ট্রাক ও পিকাপসহ বিভিন্ন যানবাহনে রাজধানীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে সাগরের এ ইলিশ ছড়িয়ে পড়ছে। চলতি সপ্তাহে স্থানীয় বাজারসহ দেশের হাট বাজারে ইলিশের মূল্য হাতের নাগালে এসেছে। যে ইলিশের কেজি ছিল ১২শ থেকে ১৫শ টাকা সেগুলো এখন ৬শ থেকে ৭শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। উপকূলীয় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটায় বছরের সর্বনিম্ন ইলিশের দাম চলছে। এক কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিনশ টাকা দরে।
এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাথরঘাটায় ২২টি বরফ কল রয়েছে তারপরও বরফের অভাবে মাছ নষ্ট হচ্ছে। তিনি এজন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন। বিদ্যুতের অভাবে মিল মালিকরা বরফ উৎপাদন করতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
হাসান মামুন/এফএ/আইআই