কোরবানির জন্য প্রস্তুত কুষ্টিয়ার দেড়লাখ পশু
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কুষ্টিয়া জেলায় পশু ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার হাটে এমনকি বাড়িতে ঘুরে ঘুরে ব্যবসায়ীরা গরু ও ছাগল কিনে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিতে শুরু করেছেন। দেশের বাজারে প্রায় এক লাখ ৫৮ হাজার পশু পাঠাতে প্রস্তুত কুষ্টিয়া জেলার কৃষক ও খামারিরা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কুষ্টিয়ার গো-খামারি এবং কৃষকরা ভালো দামে গরু বিক্রি করতে পারায় খুশি। তবে এলাকার গো-খামারি ও কৃষকদের এই হাসি শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না- এ নিয়ে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। ভারত থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গরু আসবে- বিজিবি মহাপরিচালকের এমন ঘোষণায় খামারিদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দেশের বাজারে কুষ্টিয়া অঞ্চলের গরু ও ছাগলের আলাদা কদর রয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবার প্রায় দুই লাখ কোরবানির পশু রয়েছে যা স্থানীয় মানুষের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হবে। গত বছর কুষ্টিয়ার গো-খামারি ও কৃষকরা গরুর ভালো দাম পাওয়ায় এবারও গরুর প্রতি বেশ যত্ন নিতে শুরু করেছেন। গ্রামের এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে ২/৪টি কোরবানির গরু পাওয়া যাবে না।
বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কোরবানির গরু লালন-পালন এবং কেনা-বেচার কারণে এখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন এসেছে। ধারাবাহিকভাবে পরপর কয়েকবার ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশের কারণে এখানকার খামারি ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়েছিল। কিন্তু তারপরেও তারা হাল ছাড়েনি। গতবার ভালো দাম পাওয়ায় এবার আরও উজ্জীবিত হয়ে সকলেই কোরবানির পশুর পরিচর্যায় সময় ব্যয় করছেন।
কুষ্টিয়া জেলা পশু সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার ৬টি উপজেলায় ২০ হাজার ৫৮৬টি খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রায় ৯৩ হাজার গরু, ৬৬ হাজার ছাগল এবং ৩ হাজারের মতো ভেড়া রয়েছে। সবেচেয়ে বেশি খামার কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। সদর উপজেলায় সরকারী মতে ৪ হাজার ৫১৫টি খামারে গরুর পরিমাণ ১৬ হাজার ৪৬টি, দৌলতপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৩৫১টি খামারে গরু রয়েছে ১৪ হাজার ১৭৮, কুমারখালী উপজেলায় ৪ হাজার ১৯৮ খামারে গরুর সংখ্যা ১৩ হাজার ২৫০টি, খোকসা উপজেলায় ৩ হাজার ১০৬টি খামারে গরু রয়েছে ৮ হাজার ১৬টি, মিরপুর উপজেলায় ২ হাজার ৭৩৯ খামারে গরু রয়েছে ১৩ হাজার ৭৩৯টি এবং ভেড়ামারা উপজেলার ১ হাজার ৭৬৮টি খামারে গরুর পরিমাণ ৮ হাজার ৮৭৯টি।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার খামারি এবং কোরবানির পশুর সংখ্যা অনেক বেশি। সবাই পশু বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এলাকার গরুর হাটগুলোতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। রোজার পর থেকেই দেশের বড় বড় ব্যাপারীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে কুষ্টিয়ায়।
সদর উপজেলার পাটিকা বাড়ীর হারুরিয়া গ্রামের গ্রামীণ গো-খামারের স্বত্বাধিকারী ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমার খামারে ১৫৪টি গরু ইতিমধ্যে ঢাকার এক ব্যবসায়ীর কাছে আশানুরূপ দামে বিক্রি করেছি। এর মধ্যে আরও কয়েকটি গরু, মহিষ এবং ভেড়া কোরবানির জন্য রেখেছি। আশা করছি ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো।
খোদ্দ আইলচারার মন্ডল খামারের স্বত্বাধিকারী ছলিম মন্ডল জানান, তার খামারে ৯৮টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর কাছে ২০টি গরু আশানুরূপ দামে বিক্রি করেছেন। এবার আগে ভাগে গরু বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে টেনশনমুক্ত আছেন।
কুষ্টিয়া জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা আশাদুল হক বলেন, এবারও জেলায় প্রচুর কোরবানির পশু রয়েছে। কৃষক এবং খামারিরা যত্ন নিয়ে পশু পালন করেছে। আমরা শুনেছি কৃষক এবং খামারিরা এবার কোরবানির পশু বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে খুশি।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়েছি। কোথাও এখন পর্যন্ত গরুকে মোটাজাতাকরণ ট্যাবলেট সেবনের অভিযোগ পাইনি। এলাকাবাসীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা ও লিফলেট বিলি করা হয়েছে। প্রকৃত কৃষক ও খামারিরা এই ধরনের কোনো কাজে যুক্ত নন বলেও তিনি জানান।
আল-মামুন সাগর/আরএআর/জেআইএম