১৫ আগস্ট নিয়ে পর্যটন জোনে চাঁদাবাজির অভিযোগ
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় রাসেল নামের এক যুবকের নেতৃত্বে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা পরিচয়ে রাসেল নামের ওই যুবকের বেপরোয়া চাঁদাবাজী ও দখল-বেদখলের ঘটনায় খোদ দলের নেতা-কর্মীরাও বিরক্ত বলে জানা গেছে। কিন্তু তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস করে না।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলীর পর্যটন এলাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে চাঁদাবাজির ঘটনা। ‘রাসেল’ নামের এক গডফাদারের নিয়ন্ত্রণে ১০-১২ জনে ভাগ হওয়া কয়েকটি দল একেক সময় একেক বাহানায় বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠে। পুরো বছর জুড়েই বিভিন্ন অজুহাতে দফায় দফায় চাঁদা আদায় করা হয় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শোক দিবস উপলক্ষে পহেলা আগস্ট থেকে মাঠে নেমেছে চাঁদাবাজ দল। ‘ব্যবসা করছেন তাই হাত-পা বাঁধা’ এমন বিবেচনায় চাঁদাবাজির শিকার ব্যবসায়ীরা এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন। এসব চাঁদাবাজির সবচেয়ে বেশি শিকার হন নিন্ম ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যবসায়ীরা।
সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে কটেজ জোনের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আবাসিক হোটেল, কটেজ জোন, ভ্রাম্যমাণ দোকান, হরেক রকম অফিসসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বখাটে যুবক ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এখন কেউ গিয়ে চাঁদা দিয়ে আসছেন, আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে দলের কেউ নিয়েও যাচ্ছেন। আর এসব বিষয়ে মুখ খুললেই বিপদ। একমাত্র র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপর হলেই সাধারণ ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজির হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, এবারে আমাদের উদ্যোগে কোনো প্রকার কাঙালি ভোজের আয়োজন করা হচ্ছে না। তবে আমরা নিজেদের উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল করার সিন্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে কাঙালি ভোজের সঙ্গে অংশ গ্রহণ করবে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
তিনি আরো বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে যদি কাঙালি ভোজের জন্য চাঁদাবাজি বা অপকর্ম করে তাহলে গ্রেফতার পূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন শৃংখলাবাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
জানা গেছে, গত ২ আগস্ট থেকে কটেজ জোন এলাকার একাধিক কটেজ, ভ্রাম্যমাণ দোকান, হরেক রকম অফিসসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সুযোগসন্ধানী এই নেতা তার বাহিনী দিয়ে চাঁদার পরিমাণ বসিয়ে দিয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ের এই সুযোগসন্ধানী যুবক নিজেকে ওই এলাকার একক গডফাদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার ওঠাবসা ও দহরম থাকায় প্রশাসনও তার ব্যাপারে মাথা ঘামায় না বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কটেজ ব্যবসায়ী জানান, রাসেলের রয়েছে একটি অঘোষিত টর্চার সেল। তার নেতৃত্বে পর্যটন এলাকায় সরকারি জমি দখল, অবৈধ ভাবে দোকন নির্মাণ, চাঁদাবাজি এবং নানা ওজুহাতে সাধারণ লোকজনদের ধরে তার আস্তানায় টর্চার করা হয়। সেখান থেকে সাপ্লাই দেয়া হয় সব ধরনের মাদকও। কিন্তু আইন-শৃংখলা বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের নানা ভাবে ম্যানেজ করার কারণে বিনা বাধায় অপকর্ম করছে তার বাহিনী। তাই দিন দিন পুরো পর্যটন এলাকায় বেপরোয়া ভাবে বাড়ছে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
একই ভাবে লাইট হাউজ এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, তাকে (রাসেল) এবং তার দলবলকে দমন করার জন্য র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর হওয়া বর্তমান সময়ে খুবই জরুরি। পাশাপাশি উল্লেখিত বিষয়ে গোপনে তদন্ত করলে শতভাগ সত্যতা উঠে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়টি শোনেননি জানিয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১৫ আগস্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কোনো নেতাকর্মী অপকর্ম করলে তাকে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট সোর্পদ করার কঠোর সিন্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি দলীয়ভাবেও শায়েস্তা করার কঠোর পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কেন্দ্র থেকেও এমনটি নির্দেশনা রয়েছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী এই জেলার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য বঙ্গবন্ধু প্রেমী নেতাকর্মী। তাদের স্বতফূর্ত অংশ গ্রহণের মাধ্যমে পালন করা হবে জাতির পিতার শাহাদৎ বার্ষিকী। এই পবিত্র শাহাদৎ বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে যদি আওয়ামী নামধারি সুবিধাবাদী কেউ চাঁদাবাজি বা ধান্ধাবাজি করে তাহলে ক্ষমা নেই। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে য্গোযোগ করা হলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুল বলেন, কেউ অভিযোগ করেনি। এরপরও আমরা গোপনে তদন্ত করে দেখছি। প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/আইআই