ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

জেলা প্রতিনিধি | নীলফামারী | প্রকাশিত: ০১:৪১ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০১৭

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে শেফালী বেগম (৩২) নামে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার উপজেলার খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলনঝাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে নির্যাতনকারীদের হুমকির কারণে ওই গৃহবধূ ডিমলা উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়ে শনিবার সকালে নীলফামারী জেলার বাইরের এক হাসপাতালে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নির্যাতনের শিকার শেফালী বেগম ওই গ্রামের লালন মিয়ার স্ত্রী এবং একই গ্রামের মৃত মবিয়ার রহমানের মেয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জমিজমা সংক্রান্ত এক বিবাদে শেফালীর বাবা মবিয়ার রহমানকে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এ হত্যা মামলায় এলাকার ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশ চার্জশিট দেয়। মামলাটি বর্তমানে নীলফামারী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ২২ আগস্ট এ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।

প্রভাবশালীরা ওই মামলা মীমাংসার জন্য দীর্ঘদিন চাপ দিয়ে আসছে। তারা বাবার হত্যা মামলা আপস না করায় সম্প্রতি আরেকটি মিথ্যা মামলা করেছে প্রতিপক্ষ। ফলে শেফালীর একমাত্র ভাই রমজান পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলেই শেফালী ও তার ভাইয়ের ওপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে।

এলাকাবাসী জানায়, শেফালী বেগমের দুই ছেলেমেয়ে এবং বর্তমানে তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শেফালীর স্বামী রিকশা চালাতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। ঘটনার দিন শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে একই গ্রামে বসবাসকারী তার বড় বোন আকলিমার সঙ্গে দুলাভাই রফিকুল ইসলামের ঝগড়া হয়। ওই ঝগড়া থামাতে যান শেফালী বেগম। এ নিয়ে ধাক্কাধাক্কি হলে তার দুলাভাই সামান্য আহত হন। আর এ ঘটনাকে পুঁজি করে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিরা গ্রাম্য মাতব্বরদের সহযোগিতায় শেফালীকে গরু চুরির মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে একটি গাছে বেঁধে ফেলে।

অভিযোগ মতে, খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের, খালিশা চাপানী ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শিমুল, খালিশা চাপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তানজিদার রহমান, সদ্য বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী ইউনিয়নের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল, সামছুলের ছেলে মজনুর রহমান মঞ্জু ও এলাকার দেবারু এবং দবিরুল শেফালীকে মারধর শুরু করেন। মারদরের সময় ওই গৃহবধূ নির্যাতনকারীদের বেশ কয়েকজনের হাতে কামড় দেয়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে গরু ও মাদকসহ শেফালীকে ধরিয়ে দিতে ডিমলা থানা পুলিশে খবর দেয়। পরে শেফালীর বড় বোনের স্বামী রফিকুল ইসলামকে দিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করায় নির্যাতনকারীরা।

nilfamari

খালিশা চাপানী ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সর্দার ও চার নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ রশিদুল সর্দার বলেন, ঘটনার দিন দুপুর ১২টা দিকে গৃহবধূ শেফালীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা দেখতে পেয়ে ডিমলা থানায় খবর দেয়া হয় এবং শেফালীর বাঁধন খুলি দেয়া। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ডিমলা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ দুইজন নারী পুলিশসহ ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে মাটিতে পড়ে থাকা শেফালীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে চলে যায়।

নির্যাতনের শিকার শেফালী জানান, পুলিশ চলে যাওয়ার পর তার পরিবারের লোকজন তাকে ডিমলা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করার জন্য নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। এ সময় ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তানজিদার রহমান এসে হুমকি দেয় শেফালীকে হাসপাতালে ভর্তি করলে ফেনসিডিল দিয়ে তাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়া হবে। এই ভয়ে ডিমলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। রাতে স্থানীয় একজন চিকিৎসক এসে তাকে স্যালাইন পুষ করে চলে যান। শনিবার ভোরে গ্রাম হতে বেরিয়ে জেলার বাহিরের একটি হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছেন।

এ ঘটনায় খালিশা চাপানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব হোসেন বলেন, কে বা কারা শেফালী বেগম নামের এক গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে বলে শুনেছি। তবে এ ঘটনার সঙ্গে কোনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জড়িত নয়। ঘটনাটি নিয়ে কিছু মানুষ আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

খালিশা চাপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তানজিদার রহমান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে বিকেলে গিয়েছিলাম। শুনেছি ওই মহিলা না কি ভালো নয়।

ডিমলা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ জানান, শেফালীর বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগের ঘটনাটি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ডিমলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ওই নারীর নামে গরু চুরি ও মানুষজনের হাতে কামড় দেয়ার অভিযোগ এসেছিল। কিন্তু ঘটনাটি তেমন কিছু নয়। এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে তিনি জানান।

জাহেদুল ইসলাম/আরএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন