নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের পাশে সমাহিত হবেন মুন্নু
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রী ও মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ খান মুন্নুকে আজ বুধবার বিকেলে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের পাশে সমাহিত করা হবে।
মানিকগঞ্জের তরা-গিলন্ড এলাকায় মুন্নু সিটিতে অবস্থিত মসজিদটির পাশে দাফনের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক আব্দুল আউয়াল।
মঙ্গলবার বিকেলে বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের মরদেহ ঢাকার বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মুন্নুর বড় মেয়ে মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রীতা লন্ডনে থাকায় দাফনের দিন একদিন পেছানো হয়েছে। বুধবার সকালে তার ঢাকায় পৌঁছনোর কথা রয়েছে। তিনি দেশে ফিরলেই দাফন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মুন্নুর জানাজার নামাজের সময়সূচি
দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হারুনার রশিদ খান মুন্নুর ৬টি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রথম জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
বেলা সাড়ে ১২টায় নিজ প্রতিষ্ঠান ধামরাইয়ের মুন্নু সিরামিকসে হবে ৩য় জানাজা। দুপুর দেড়টায় মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে ৪র্থ জানজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর আড়াইটায় মরদেহ নেয়া হবে তার গ্রামের বাড়ি জেলার হরিরামপুর উপজেলার পাটগ্রামে। পাটগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ৫ম জানাজা।
বিকেল ৪টায় মানিকগঞ্জের গিলন্ডতে মুন্নু মেডিকেল কলেজ মাঠে ৬ষ্ঠ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাকে মুন্নু সিটিতে নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের পাশে সমাহিত করা হবে।
বার্ধক্যজনিত কারণে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গিলন্ড এলাকায় মুন্নু সিটির নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন হারুনার রশিদ খান মুন্নু। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
তার মৃত্যুতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ (ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয়) এএম নাঈমুর রহমান দুর্জয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান শান্তসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সংগঠনসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
মুন্নুর বর্ণাঢ্য জীবন
হারুনার রশিদ খান মুন্নু মানিকগঞ্জ-২ ও ৩ আসনে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।দফতরবিহীন মন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৩৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার গালিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার গিলন্ড এলাকায় মুন্নু নগরে বসবাস করতেন। মানিকগঞ্জে বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানা, হাসপাতালসহ ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
প্রবীণ এ রাজনীতিকের মৃত্যুতে মানিকগঞ্জে শেকের ছায়া নেমে আসে। মরদেহ একনজর দেখতে ভিড় করেন দলীয় নেতা-কর্মীসহ হাজারো মানুষ।
হারুনার রশিদ খান মুন্নু আর্ট প্রেসের মাধ্যমে কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন।যার পূর্ণতা পায় মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। তিনি মুন্নু সিরামিক, মুন্নু জুটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু ফেব্রিকস ও মুন্নু অ্যাটায়ার লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।
মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে রেখেছেন অনন্য অবদান। মুন্নু মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, মুন্নু নার্সিং ইনস্টিটিউট, মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।
১৯৫২ সালে মানিকগঞ্জ মডেল হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, জগন্নাথ কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) এবং পরবর্তী সময়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট (সিএ) কোর্স সম্পন্ন করেন।
দলীয় কর্মসূচি
বর্ষীয়ান নেতা মুন্নুর মৃত্যুতে মানিকগঞ্জে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার তিন দিন শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা বিএনপি।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন শাখা দলীয় কার্যালয়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ এবং জেলা শহরের দলীয় কার্যালয়ে শোক বইতে স্বাক্ষর। এছাড়া আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর জেলায় মসজিদসমূহে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
বি.এম খোরশেদ/এফএ/আরআইপি