ঝুট সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ নিতে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের গার্মেন্টের ওয়েস্টেজ (ঝুট) সেক্টর দখল ক্ষমতাসীন দলের শতাধিক ঝুট সন্ত্রাসী বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ঝুট সেক্টর দখল নিতে সন্ত্রাসীরা নিজেদের বাহিনী নিয়ে স্বশস্ত্র মহড়া দিয়ে চলছে। তবে অধিকাংশ ঝুট সন্ত্রাসী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের সমর্থিত লোক হওয়ার সুবাদে সন্ত্রাসীরা একের পর এক কর্মকাণ্ড করলেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি শামীম ওসমান ফতুল্লার গাবতলী এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী সভায় ঝুট সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও ঝুট সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড থেমে নেই। তারা একের পর এক কর্মকাণ্ড ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ এলাকাবসীর।
অভিযোগ রয়েছে, ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ার সুবাদে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে গার্মেন্ট কারখানার মালিকদের জিম্মি করে ঝুট নিয়ে যাচ্ছেন। কারখানার মালিকরা সন্ত্রাসীদের ঝুট দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে সন্ত্রাসীদের হুমকির শিকার হতে হয়। যার কারণে বাধ্য হয়ে গার্মেন্ট মালিকরা সন্ত্রাসীদের ঝুট দিয়ে দেন।
এদিকে ঝুটের জন্য বিভিন্ন গার্মেন্টের সামনে মহড়া দিচ্ছেন ওই সকল সন্ত্রাসীর আর্শিবাদপুষ্টরা। এতে করে বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্ট মালিকের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা। আর ঝুট সন্ত্রাসীরা আবার মালিকপক্ষের হয়ে শ্রমিকদের উপরেও নির্যাতন চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত পহেলা মে মহান মে দিবসের অনুষ্ঠানে এমন অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক নেতা। ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স এর জেলা শাখার সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সেণ্টু বলেন, মালিকপক্ষের হয়ে ঝুট সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি হামলা করে আসছেন। অ্যাসরোটেক্স গার্মেন্ট, ওসমান, ক্যাডটেক্স গার্মেন্টসহ বিভিন্ন গার্মেন্টের শ্রমিকদের উপর ঝুট সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ১৮ মে ফতুল্লার পশ্চিম মাসদাইরে ডেফোডিল গার্মেন্টের ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নিতে আওয়ামী লীগ নেতা মতি প্রধান ও রমু বাহিনীর মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় উভয় গ্রুপের মধ্যে ৫/৬ জন আহত হয়েছেন। ১৬ মে ফতুল্লার গাবতলী টাগারপাড়ে আধিপত্য নিয়ন্ত্রন ও ঝুট সেক্টর দখল নিয়ে টুণ্ডা নাসির, নাডা শাহিন, ফুটবলার লিটন গ্রুপের মধ্যে জিলানীর ছেলে রফিক, উজ্জল বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ওই সময়ে উজ্জল (৩২) নামের এক সন্ত্রাসীকে বড় ছুরিসহ আটক করে পুলিশ। পরে টুণ্ডা নাসির, নাডা শাহিন বাহিনী ওই গামের্ন্টের ঝুট নামিয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনায় জিলানীর তিন ছেলেসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। গাবতলী টাগারপাড়ের ঝুট সেক্টর দখল নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি রফিক-উজ্জল গ্রুপের সঙ্গে একই এলাকার টুণ্ডা নাসির, নাডা শাহীন গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সন্ত্রাসীরা ৫-৬ রাউন্ড গুলি ছুড়েন। সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ১২ জন।
এসব ঝুট সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা। ঝুট সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে মাশোহারা আদায় করা হচ্ছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, ফতুল্লা একটি শিল্প এলাকা হিসেবে অনেকেই শিল্পকারখানার সামনে অবস্থান করতে পারেন। আর বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টে ঝুট নামানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে থাকে। কোনো সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের আপোষ হতে পারে না। ঝুট সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ঈদের আগে যাতে ঝুট সেক্টর নিয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেদিকে পুলিশ প্রশাসন তৎপর থাকবে। ফতুল্লায় আইনশৃঙ্খলা নিযন্ত্রণে রাখতে পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে।
মো.শাহাদাৎ হোসেন/এমজেড/আরআইপি