বিরল রোগে আক্রান্ত আলিমুনকে ঢাকায় আনা হচ্ছে
বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু আলিমুনকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চারদিন চিকিৎসার পর ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে প্রেরণের সিন্ধান্ত নিয়েছে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। সেখানে তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব বলে আশা করেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. সাইদ আহমেদ।
গত রোববার বিকেলে বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের সোনাকান্দর গ্রামের শিশু আলিমুনকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. অরুণ কুমার মন্ডল জানান, শিশু আলিমুনকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার উদ্দেশে যাওয়া বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু আলিমুনের সঙ্গে তার মা ছকিনা বেগম ছাড়াও গজালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন মাঝি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য ছালাম শেখ রয়েছেন।
বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনির হোসেন জানান, ঢাকায় পৌঁছানোর পর শিশু আলিমুনকে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তিসহ চিকিৎসার সব দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের। তার নির্দেশে শিশু আলিমুনের চিকিৎসার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে জেলা ছাত্রলীগ ১৭ জুলাই কচুয়া থেকে শিশুটিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার পর আবার শিশুটি বাগেরহাটে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে এ প্র্যতাশা করেন তিনি।
অর্থাভাবে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু আলিমুনের চিকিৎসা হচ্ছে না- ফেসবুকে এক সংবাদকর্মীর এমন আবেদনে সাড়া দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। পরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক-৩ ডা. জুলফিকার আলী লেলিনের সঙ্গে শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলে তার নির্দেশে শিশুটিকে ঢাকায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়।
গত ১৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের সোনাকান্দর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম শিশু আলিমুন বিরল রোগে আক্রান্ত, তার চিকিৎসা প্রয়োজন- এমন আবেদন করে দুটি ছবিসহ তার ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই পোস্টটি জাগো নিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ শেয়ার করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন অসহায় এ শিশুর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার কথা ওই সংবাদকর্মীর কাছে প্রকাশ করেন।
৬ বছর বয়সী আলিমুন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের সোনাকান্দর গ্রামের দিনমজুর আজাহার শেখ ও সকিনা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। সে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত সোনাকান্দর হাজীবাড়ি জামে মসজিদের মসজিদভিক্তিক মক্তবের শিশু শ্রেণির ছাত্র। দুই বছর বয়সের সময় তার মাথা ও শরীরে এই রোগ দেখা দেয়।
তিন বছর বয়সে আলিমুনের বাবা আজাহার শেখ মারা গেলে অসহায় সকিনা শিশু শুকুর আলী শেখ ও আলিমুন শেখকে নিয়ে ভীষণ কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে থাকেন। চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশু আলিমুনকে ঢাকায় নিতে বললেও অর্থাভাবে তা আর হয়নি।
অভাবের সংসারের ঘানি টানতে মা সকিনা বেগম গত দেড় বছর আগে রাস্তায় কাজ করতে গিয়ে দিনমজুর জাকিরকে দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে বেছে নেন। তারপর থেকে অসহায় শিশু আলিমুন ও শুকুর আলী সোনাকান্দর গ্রামে দিনমজুর চাচা মোজাহার শেখ ও বড় চাচা শাজাহান শেখের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠছে। আলিমুনের দুই চাচাও অতিদরিদ্র হওয়ায় অর্থাভাবে আলিমুনের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি।
শওকত আলী বাবু/আরএআর/জেআইএম