এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা টিটু চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ১০ ছাত্রলীগ নেতার নামোল্লেখসহ ৩৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে মহানগরের শাহপরাণ থানায় দ্রুত বিচার আইনে এ মামলা দায়ের করেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র চন্দ।
মামলায় ছাত্রলীগ নেতা টিটু চৌধুরী ছাড়াও ১০ ছাত্রলীগ নেতার নামোল্লেখ করে অজ্ঞত আরো ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সংঘটিত এ ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ছাত্রাবাসে অতর্কিত হামলা, ভাঙচুর ও শিক্ষার্থীদের সর্বস্ব লুটপাটের অভিযোগ এনে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকালে ছাত্ররা ঘুমন্ত অবস্থায় টিটু চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একদল সশস্ত্র অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছাত্রাবাসে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। এতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রবাসের বিভিন্ন ব্লকের ৩৯টি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। ছাত্রলীগ নেতা টিটু চৌধুরী এবং ডায়মন্ডের নেতৃত্বে এ হামলা ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
পাঁচ বছর আগে ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জের ধরে হোস্টেলের ৪২টি কক্ষ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পোড়া ছাত্রাবাস সংস্কারের পর এবার ফের ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ।
গত বৃহস্পতিবার হামলার পরপরই কলেজ কর্তৃপক্ষ শাহপরাণ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। এছাড়া তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর দুইদিন পর রোববার বিকেলে কলেজ অধ্যক্ষ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন বলেন, ভাঙচুরের দিন জালালাবাদ থানাপুলিশ কুমারগাও থেকে ৫ জনকে আটক করেছিল। এছাড়া আমরা আনোয়ারুল ইসলাম নামে একজনকে ওইদিনই আটক করি। এই ছয়জনকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
কুমারগাও এলাকা থেকে আটকরা হলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জাওয়ার আবদুল মান্নানের ছেলে কাউসার, তাহিরপুর উপজেলঅর রতনশ্রী গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে শাওন, সুনামগঞ্জ সদরের অচিন্তপুর এলাকার ইলিয়াস মিয়ার ছেলে রাফিজুল ইসলাম, জগন্নাথপুর উপজেলার কাজীপুর গ্রামের অরবিন্দ চৌধুরীর ছেলে নিউটন চৌধুরী, তাহিরপুর উপজেলার কালিজুড়ি রামনগর এলাকার আব্দুল হাসিমের ছেলে সোহাগ মিয়া, দিরাই উপজেলার কাউয়াজুড়ি গ্রামের আকিল আলীর ছেলে সুমন এবং মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ গ্রামের সুভাষ আচায্যের ছেলে সৌরভ আচার্য্য। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।
এমসি কলেজ ১৮৯২ সালে রাজা গিরিশ চন্দ্র রায় তার পিতামহ মুরারি চাঁদের (এমসি) নামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। টিলাগড় এলাকায় ৬০০ শতক জায়গার ওপর ১৯২০ সালে ব্রিটিশ আমলে আসাম ঘরানার স্থাপত্য রীতির সেমিপাকা ঘরের মাধ্যমে ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়েছিল।
আগুনে পোড়ানোর ঘটনার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্দেশে দুই বছরের মাথায় পোড়া ছাত্রাবাস আগের কাঠামোয় সংস্কার করা হয়। গত বছর থেকে আবাসিক ছাত্র ভর্তি করার পর সচল হয় ছাত্রাবাসটি। গত ১৩ জুলাই এটি ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ।
ছামির মাহমুদ/এফএ/জেআইএম