চিকিৎসার অভাবে কঙ্কালে পরিণত হচ্ছে পুতুল
সদা হাস্যোজ্জল মেয়েটির বছর খানেক আগে থেকেই পেটের মধ্যে পানি জমতে শুরু করে। বেশ কয়েকবার পানি বেরও করা হয় সাতক্ষীরার স্থানীয় ডাক্তারের মাধ্যমে। কিন্তু এরপর থেকেই দিন দিন শুকিয়ে যেন কঙ্কালে পরিণত হচ্ছে মেয়েটি। মাথার চুলগুলো পড়ে যাচ্ছে। আগের ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই এই মেয়েটিই সে।
বলছিলাম সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার কুমিরা ইউনিয়নের দাঁদপুর গ্রামের মাজিদা আক্তার পুতুলের (২২) কথা। অসুস্থ হওয়ায় পুতুলকে মায়ের কাছে রেখে গেছে স্বামী। এখন আর কোনো খোঁজ নেয় না। লামিয়া আক্তার নামে ছোট্ট একটা মেয়ে রয়েছে পুতুলের। তারও দেখার কেউ নেই।
পুতুলের বাবা ফয়েজউদ্দীন মারা গেছেন ১৬ বছর আগেই। মা রিজিয়া বেগম দিন মজুরের কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। অনেকটা কষ্ট আর ধার দেনা করে পাটকেলঘাটার চমরখালি গ্রামের মৃত দিদার মোড়লের ছেলে আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। অনেকটা ভালোই কাটছিল দিন। হঠাৎ বছর পোরোতেই দূর্যোগ নেমে এলো এই পরিবারে। পেটে পানি জমে যায়। এরপর সাতক্ষীরার ডাক্তার ফয়সাল আহম্মেদকে দেখানো হয়। তাতে কোনো সুফল মেলেনি।
পুতুলের মা রিজিয়া বেগম এসব জানিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, মাঠেঘাটে কাজ করে যত টাকা রোজগার করেছি সব টাকাই মেয়ে পুতুলের পেছনে খরচ করেছি। কোনো লাভ হলো না। এখন বাড়িতেই থাকে সব সময়। মাথার চুলগুলোও পড়ে যাচ্ছে। টাকার অভাবে কোনো চিকিৎসাও করাতে পারছি না। এখন মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
কুমিরা ইউনিয়নের ৯নং দাদপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লাল মিয়া চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, পরিবারটি গরীব। টাকার অভাবে মেয়েটির চিকিৎসা হচ্ছে না। কী রোগ সেটাও জানা যায়নি।
চিকিৎসার জন্য কোনো সহযোগিতা করেছেন কিনা জানতে চাইলে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে পুতুলকে চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তার ফয়সাল আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকবার আমার কাছে এসেছিল। আমি দেখেছি। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করানো হয়েছিল। তবে অনেক দিন আগে হওয়ায় ব্যবস্থাপত্র না দেখে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, দিন দিন শুকিয়ে যাওয়া ও মাথার চুল পড়ে যাওয়া এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। পুষ্টিহীনতা বা লিভারের সমস্যার কারণেও হতে পারে। উন্নত চিকিৎসা হলে রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব।
পুতুলের প্রতিবেশী খায়রুল ইসলাম জানান, কয়েকবার ডাক্তারের কাছে গেলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় সেটা জোগাড় করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যে কারণে পরবর্তীতে কোনো ভালো ডাক্তারের কাছেও নিতে পারেনি। স্থানীয় ডাক্তার বা কবিরাজ দেখিয়েও সুফল মেলেনি।
মাজিদা আক্তার পুতুল জাগো নিউজকে বলেন, আমি সুস্থ হতে চাই। এখন আমার স্বামীও আমার খোঁজ নেয় না। আমি স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চাই। আপনারা চেষ্টা করুন একটু আমার জন্য। আমার দিনমজুর মায়ের পক্ষে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। স্বামীর পরিবারও করছে না। আপনারা সহযোগিতা করুন।
আকরামুল ইসলাম/এফএ/এমএস