পদ্মার ভাঙনে আড়াই শতাধিক বাড়িঘর বিলীন
পদ্মা নদীর ভাঙনে গত ১০ দিনে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ১২টি গ্রামের আড়াই শতাধিক বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও এক হাজার বাড়িঘর। ভাঙনের শিকার হয়েছে ১৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভিটেমাটি হারা মানুষদের খাস জমি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার ইউনিয়নের সুরেশ্বর, চরমহন, হালসার, কেদারপুর ইউনিয়নের কেদারপুর, চর নড়িয়া, সাহেবের চর, পূর্ব নড়িয়া, পাঁচগাও, চর জাজিরা, মোক্তারের চর ইউনিয়নের মাদবর কান্দি, ঈশ্বরকাঠি ও শেরআলী কান্দী গ্রামের আড়াই শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর চলে গেছে নদীগর্ভে। বিলীন হয়ে গেছে ১২টি গ্রামের গাছপালাসহ সবকিছু। তিনটি ইউনিয়নে হুমকির মুখে আছে এক হাজার পরিবারের বাড়িঘর।
কাইয়ুম খা ও ওয়াপদা বাজার সড়কের আধাকিলোমিটার রাস্তা ভেঙে গেছে। নদীর ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছেন নদী পাড়ের লোকজন। চোখের সামনে নদীতে বিলীন হচ্ছে তাদের বাসস্থান। নদী ভাঙনের কবলে পড়া এসব লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের এলাকায়।
নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের চর নড়িয়া গ্রামের আলমগীর হোসেন জানান, চর নড়িয়া গ্রামের তিনভাগের দুই ভাগ বাড়িঘর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি হারা মানুষ জন অন্যের বাড়িতে কিংবা সরকারি রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। যাদের অবস্থা ভালো তারা অন্য গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করছে।
একই গ্রামের আলেক চাঁন বেপারী বলেন, আমার নিজের বাড়িঘরসহ আমাদের অন্তত ১০টি বাড়ি চলে গেছে নদীগর্ভে। শুধু ঘরবাড়িই নয় ফসলি জমিও চলে গেছে নদী গর্ভে। এতোটুকুও জমি বাকি রইল না যে সন্তানদের নিয়ে থাকবো।
পূর্ব নড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা খালেক মেলকার জানান, জমিজমা ও ঘরবাড়ি হারা মানুষ এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। পূর্ব নড়িয়া গ্রামের অর্ধেক বাড়িঘরসহ ফসলি জমি চলে গেছে নদীগর্ভে। যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে যতটুকু সম্পত্তি আছে তাও পদ্মা নদীর গর্ভে চলে যাবে কয়েক দিনের মধ্যেই। তিনি দ্রুত পূর্ব নড়িয়া গ্রামের নদীর পাড় বাঁধানোর দাবি জানান।
নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন বলে জানান মোক্তারের চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌকিদার।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, পদ্মা নদীর পাড় রক্ষায় জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর থেকে নড়িয়ার সুরেশ্বর লঞ্চঘাট পর্যন্ত বাঁধ দেয়া হবে। একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া আছে। কমিশনের প্রকল্পটা পেলে নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব। আমরা প্রকল্পটি পাওয়ার চেষ্টা করছি।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, নদীগর্ভে ঘরবাড়ি ও জমি বিলীন হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কিছু তালিকা পেয়েছি। তার মধ্যে মোক্তারের চর ইউনিয়নের ৫০টি পরিবারকে চাল দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে আরও নামের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
তবে নদী ভাঙনে যারা ভিটেমাটি হারিয়েছে তাদের খাস জমি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুর হোসাইন খান।
ছগির হোসন/আরএআর/পিআর