মেলায় যাওয়ার টাকা জোগাতেই খুন করা হয় কামালকে
বান্দরবানের লামা উপজেলায় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক মো. কামাল উদ্দিন হত্যা মামলার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া তিন কিশোরের জবানবন্দিতে সেই নৃশংসতার বর্ণনা মিলেছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলার একটি রেস্তোরায় সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন এ তথ্য প্রকাশ করেন।
উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারিক শামি আক্তার সোমবার রাতে ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত প্রায় ২ ঘণ্টা তিন কিশোরের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
অভিযুক্তদের বরাত দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ২৬ মে শুক্রবার রাতে উপজেলার সরই ইউনিয়নের পাশাপাশি গজালিয়া ইউনিয়নের গাইন্ধা পাড়ায় মেলা বসে। মেলায় অর্থ খরচ করার মত টাকা ছিল না তিন বন্ধু শৈতমনি ত্রিপুরা, মাইকেল ত্রিপুরা ও মাংচ মুরুং’র কাছে।
সরই ইউনিয়নের টংগঝিরি পাড়ার বাসিন্দা যুদ্ধারাম ত্রিপুরার ছেলে শৈত মণি ত্রিপুরা (১৮), নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের লংগু উত্তম ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা এনজয় ত্রিপুরার ছেলে মাইকেল ত্রিপুরা (১৮) এবং রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি ইউনিয়নের সরি পাড়ার বাসিন্দা মেনঙ্গি মুরুংয়ের ছেলে মাংচ অং মুরুং (১৮)। তারা সবাই সরই ইউনিয়নের সরই উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।
ওসি আরো বলেন, কিভাবে মেলার খরচ যোগান দেওয়া যায় সে বিষয়ে তারা পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামাফিক উপজেলার কেয়াজুপাড়া পশ্চিম বাজারের একটি কামারের দোকান থেকে ১টি ছুরি কেনে।
তারপর তিনজন মিলে মো. কামাল উদ্দিনের মোটরসাইকেলটি ৫শ টাকা চুক্তিতে ভাড়া নেয়। পরে মোটরসাইকেলটি গজালিয়া ডিসি রোড সংলগ্ন হালিমের রাবার বাগানের সামনে পৌঁছলে চালককে গাড়ি থামাতে বলে ওই তিন যুবক। পরে চালক কামালের পকেট থেকে ৭শ টাকা ছিনিয়ে নেয়। সেইসঙ্গে কোনো প্রকার প্রমাণ না রাখার জন্য কামালের মোবাইল ফোনটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।
পরে অপরাধীদের যাতে চিহ্নিত করতে না পারে সেজন্য কামালকে উপর্যপুরি ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে মরদেহ জঙ্গলে ঝোঁপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে রাখে। মোটরসাইকেলটিও পাহাড়ের খাদে ফেলে দেয়। শেষমেষ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর মেলায় নাচ দেখে আবারো তারা ক্যয়াজুপাড়ায় ফিরে যায়।
এদিকে, ২৬ মে শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার সরই ইউনিয়নের হিমছড়ি এলাকার বাসিন্দা মৃত অজু মিয়ার ছেলে মো. কামাল উদ্দিনকে অপহরণের পর খুন করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন শনিবার রাতে গজালিয়া ইউনিয়নের ডিসি রোড এলাকার হালিমের রাবার বাগান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ছকিনা বেগম (২৮) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে লামা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।হত্যা মামলা দায়েরের পর মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গত ৮ জুলাই ক্যয়াজুপাড়া বাজারের একটি ভাড়া বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে লামা থানা পুলিশ।
লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মোটরসাইকেল চালক কামালের হত্যাকারীরা কিশোর। তাই বয়স নির্ধারণের জন্য গ্রেফতারকৃতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সৈকত দাশ/এফএ/এমএস