কক্সবাজারে বন্যার পানি নেমে ভেসে উঠছে ক্ষত
কক্সবাজারে প্লাবন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। শুক্রবার ভোর থেকে ভারী বর্ষণ কমে যাওয়ায় জেলার মিঠাপানির তিন নদীতে কমেছে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা। ফলে ডুবে থাকা কক্সবাজারের বিস্তৃর্ণ জনপদ থেকে নামতে শুরু করেছে পানি।
এদিকে পানি নামতে শুরু করার সাথে সাথে ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। এতে দুর্ভোগ আরও বাড়ছে প্লাবিতদের। এখনও পর্যন্ত দুর্গত জনপদের মানুষের মাঝে খাবার ও পানীয় জলের সংকট রয়েছে। টানা কয়েকদিনের বর্ষণ ও প্লাবন দুর্যোগে শিশু ও নারীসহ জেলায় ১১ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
দর্গত মানুষদের মাঝে ৫ লাখ নগদ টাকা ও ৫০ মেট্রিকটন খাদ্যশষ্য এবং দু’হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম, জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল রাশেদ, পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ, চৌফলদন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াজ করিম বাবুল, ইসলামাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক জানান, টানা এক সপ্তাহের বর্ষণ বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের কয়েক লাখ মানুষকে চরম দুর্গতিতে ফেলেছে।
শুক্রবার ভোর থেকে ভারী বর্ষণ থেমে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে দুর্গতরা। তবে প্লাবিত বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পানি নামলে কাদায় একাকার হয়েছে আসে সব। নলকূপগুলোও পানি থেকে মাথা তুললেও এখনও খাবারের উপযোগী পানি পাচ্ছে না অনেক এলাকার মানুষ। আর রান্নাঘর পানিতে তলিয়ে থাকায় চুলাও রান্নার উপযোগী করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিশুদ্ধ জল ও খাবারের সংকট এখনোও রয়েছে।
একই অবস্থার কথা জানান চকরিযা উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম এমএ। তিনি জানান, মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার অন্তত ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি কমে যাওয়ায় পানিও কমতে শুরু করেছে। কিন্তু ক্ষতস্থানগুলো ভেসে উঠে দুর্ভোগ আরও বাড়াচ্ছে। চরম কষ্টের মাধ্যমে দিনযাপন করছে দুর্গতরা। এখানে খাবার ও বিশুদ্ধ জলের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারিভাবে পাওয়া ত্রাণ অপর্যাপ্ত। তাই সমাজের বিত্তবানদের দুর্গতদের সহায়তায় এদিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার, বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম, ঢেমুশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু, পশ্চিমবড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলা ও বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশর বলেন, উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় সাগরের জোয়ারের পানি ও ঢলের পানি ইউনিয়নের নীচু এলাকা পানির সাথে একাকার হয়ে যায়। বানের পানিতে জিন্মি হয়ে পড়া মানুষ পলিথিনের তাবু টানিয়ে পরিবার সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও চিরিঙ্গা বদরখালী সড়কে। এসব দুর্গত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও পানীয় জলের হাহাকার চলছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, বৃষ্টি থেমে ঢলের তীব্রতা কমলেও কক্সবাজার সদরের উপকূলীয় গোমাতলী ও মহেশখালীর ধলঘাটায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রতিনিয়ত জোয়ারভাটা চলছে। বর্ষণ ও জোয়ারের পানি দু’দিকেই তারা ভোগান্তি সয়ে যাচ্ছে। সমতলের লোকজন পানির ভোগান্তি থেকে একটু মুক্ত হলেও উপকূলের লোকজন আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। বিশেষ করে গোমাতলীর ৮ গ্রামের অর্ধলাখ মানুষ জোয়ার ভাটায় ভাগ করে জীবন অতিবাহিত করছে। ঢলের বন্যায় দুর্গতদের মতো এখানকার লোকজনও খাবার ও পানীয় জলের সংকটে জীবন যুদ্ধ করছেন।
রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পাহাড়ি ঢল নেমে গেলেও দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না বিপদাপন্নদের। চার দিকে সংকট আর সংকটে দিনাতিপাত করছে বন্যা কবলিতরা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর সৃষ্টি। একে ঠেকানো যায় না তবে মোকাবেলা করা হচ্ছে। দুর্গত মানুষগুলোকে যথাসাধ্য খাবার ও অন্যান্য সহযোগিতা দেয়া অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে রামু, উখিয়া, সদর ও চকরিয়ায় নগদ ৫ লাখ টাকা ৫০ মেট্রিকটন খাদ্যশষ্য ও দু’হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছে। তালিকা অনুসারে এসব দ্রব্যাদি বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
এমএএস/পিআর