ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রিকশাচালক ছাত্রকে চাকরি দিল সোনারগাঁয়ের সেই এসআই

প্রকাশিত: ০৩:৪২ পিএম, ০৭ জুলাই ২০১৭

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার নব্য পদোন্নতি পাওয়া সেই এসআই আবুল কালাম আজাদ মানবিক কাজে অবদান রেখে আবারও আলোচনায়। তিনি মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা শুনলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাই একের পর এক মানবসেবায় এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পুলিশের চাকরি করেও তিনি সব সময় চিন্তা করেন কীভাবে মানুষের বিপদে পাশে থাকা যায়। একজন পুলিশের চিন্তাচেতনা এমন হয় তা আবুল কালাম আজাদকে না দেখলে জানা যেত না। এবার তিনি একজন রিকশাচালককে একটি ফার্নিচার তৈরির কারখানার ম্যানেজার হিসেবে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

পিপুল রায় রিকশাচালক হলেও তিনি এবার অনার্সের পরীক্ষার্থী। রিকশা চালিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ বহন করতেন এবং পরিবারের সংসারে সহযোগিতা করতেন। এখন থেকে অনার্সের পরীক্ষার্থী পিপুল রায়কে আর রিকশা চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হবে না। রিকশাচালক থেকে ভালো একটি চাকরি পাওয়ায় নিজের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন ঘটায় খুব আনন্দিত পিপলু।

এদিকে সোনারগাঁ থানায় আবুল কালাম আজাদ এএসআই থাকাকালীন নিজের ভবিষ্যতের জন্য জমাকৃত তহবিলের টাকা উত্তোলন ও নিজের স্ত্রীর স্বর্ণের গহণা বিক্রি করে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে স্বজনহারা অসহায় বৃদ্ধা রুপবাহারকে একটি আদর্শ ঘর নির্মাণ করে দেন।

সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি পূর্বপাড়া গ্রামের স্বামী ছেলে-মেয়ে ও স্বজনহীন রূপবাহারের এক টুকরো জমি থাকলে মাথা গোঁজার জন্য ছিল ভাঙা একটি ঘর। রীতিমতো বলতে গেলে খোলা আকাশের নিচে জীবন যাপন করতেন অসহায় বৃদ্ধা রূপবাহার।

গত ২৭ জানুয়ারি আবুল কালাম আজাদ স্থানীয় মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বাসায় যাওয়ার পথে রূপবাহারের মানবেতর জীবন যাপনের কাহিনি শুনে ছুটে যান। সেখানে উপস্থিত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় জরাজীর্ণ ঘরে বৃদ্ধা রূপবাহারকে দেখতে পান। পরে বৃদ্ধা রূপবাহারকে দেখে তার সব দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

পিপলু রায় ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈর উপজেলার চোপড়া এলাকার চিহারু ব্রাহ্মণের ছেলে। তিনি ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। অভাবের কারণে তার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে গত দুই মাসে আগে গ্রামের বাড়ি হতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চলে আসেন। সেই বড় ভাই পিপুলকে ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা ব্যবস্থা করে দেন।

পুলিশের এসআই আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে জানান, গত ৪ জুলাই রাতে সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা খন্দকার প্লাজার সামনে থেকে রিকশাযোগে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। পরে রিকশাচালক পিপলুকে তার স্ত্রী-সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করলে মুচকি হাসি দিয়ে বলে স্যার এখনও তো লেখাপড়া শেষ হয়নি, বিয়ে করবে কীভাবে। পরে তাকে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে সে জানায় অনার্স ফাইনাল বর্ষের ছাত্র। সে অভাবের কারণে গ্রামের বাড়ি থেকে সোনারগাঁয়ে এসে রিকশা চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করছে। আর রাতে রিকশার গারেজের বিদ্যুতের বাতির আলোতে লেখাপাড়া চালিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, পিপলুর সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে ভারাক্রান্ত মনে সে বলে আয় করতে এসে ব্যয়ের খাতায় নাম লিখে ফেললাম। কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, গত ২ জুন সোনারগাঁ জাদুঘরের সামনে একজন প্রতারক রিকশার যাত্রী সেজে উঠে তাকে পাঁচশ টাকা দিয়ে দোকান থেকে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে আসতে বলে। বিরিয়ানি আনতে গিয়ে এসে রাস্তায় আর রিকশাসহ ওই লোককে দেখতে পায়নি। অনেক খোজাঁখুঁজি করেও রিকশার খোঁজ পায়নি সে। ভাড়ায়চালিত রিকশাটি চুরি হওয়ায় মালিককে ২০ হাজার টাকা কিস্তিতে দিতে হচ্ছে। তার মধ্যে মাত্র ৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

তার অনার্স পরীক্ষার ফরম ফি জমা দিতে হবে সেখানেও লাগবে ৬ হাজার পাঁচশ টাকা। পিপলুর কথা শুনে দুই চোখে অশ্রু চলে আসল আর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম এ প্রতিভাবান পরিশ্রমী ছাত্রের কল্যাণে একটা কিছু করব। অবশেষে প্রকৌশলী তানবীর মাহমুদ ভাইয়ের সঙ্গে পিপলুর বিষয়ে আলোচনা করা হয়। পরে তানভীর ভাই তার মালিকানাধীন মোগল ট্রিমস ইন্ডাস্ট্রিজে ম্যানেজার হিসেবে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়।

পিপলু জাগো নিউজকে জানান, দারিদ্র্যতার কারণে গ্রামের বাড়ি থেকে সোনারগাঁয়ে এসে রিকশা চালিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাড়সহ পরিবারকে সহযোগিতা করতে হতো। তারা চার ভাই ও এক বোন। তিন ভাই কৃষিকাজ করে কোনো রকম সংসার চালায়। লেখাপড়ার খরচ বহন করতে কষ্ট হতো। বাধ্য হয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে চাকরির খোঁজে ঢাকায় চলে আসে। পরে সোনারগাঁয়ে গিয়ে রিকশা চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করে। ভাগ্যক্রমে সোনারগাঁয়ে এসআই আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে দেখা হয় এবং তিনি আমাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করেন।

এমএএস/পিআর

আরও পড়ুন