মদনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলোতে খাবারের অভাব
১ জুলাই থেকে ওএমএসের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নেত্রকোনার মদন উপজেলার শত শত কৃষক পরিবার খাদ্যাভাবে ভুগছে। প্রতিদিন ওএমএস ডিলারের দোকানে গিয়ে ভিড় জমিয়ে চাল না পেয়ে কৃষকরা খালি হাতে বাড়ি ফেরায় এদের পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্যাভাব।
চলতি বছর অকাল বন্যায় মদন পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে ১৩ হাজার ৮৫ হেক্টর জমির আধা পাকা বোরো ধান তলিয়ে যায়। এতে করে সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২৩ হাজার ৯৭৫ কৃষকের ১৭১ কোটি ২৮ লাখ ২৬ হাজার টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে।
তবে কৃষকদের মতে ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকার বেশি। পৌরসভাসহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ৯ হাজার ৫০০ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্যজীবী পরিবারের মাঝে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা করে বিতরণের কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ভিজিএফ কর্মসূচির চাল নিতে পারে না তারা ওএমএসের ১৫ টাকা কেজি ধরে চাল কেনার ওপর নির্ভরশীল। সমস্যা সমাধানে সাতজন ডিলারের মাধ্যমে পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের সাটি স্থানে ওএমএস কার্যক্রম চালু করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে উপজেলার ফতেপুরসহ অন্যান্য গ্রামের আয়েশা আক্তার, মরিয়ম আক্তার, আবুল কাসেম, মান্নান, শিফন মিয়া, রাজধর মিয়া, রহিমা বেগম, কালু রবিদাস ও হীরামন জাগো নিউজকে জানান, অকাল বন্যায় আমাদের বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারিনি। ওএমএস চালু হওয়ায় আমরা ১৫ টাকা কেজি ধরে চাল ক্রয় করে কোনোভাবে জীবনধারণ করছি। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে ডিলার চাল না দেয়ায় বাজার থেকে ৪৫-৫০ টাকা ধরে চাল ক্রয় করে জীবন চালাতে বেকায়দায় পড়েছি। সরকারকে আমাগো বাঁচানোর জন্য দ্রুত এ কর্মসূচি চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
ওএমএস ডিলার নুরে আলম সিদ্দিকি জাগো নিউজকে জানান, ঈদুল ফিতরের পর চাল উত্তোলনের চিঠি না আসায় আমরা ডিও করতে পারছি না। প্রতিদিন শত শত ক্ষতিগ্রস্ত লোক চাল নিতে আমাদের দোকানে ভিড় করছে। আমরা তাদের সান্ত্বনা দিয়ে বিদায় করছি।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা রেজাউল করিম জাগো নিউজকে জানান, জুন পর্যন্ত ওএমএস কার্যক্রমের বরাদ্দ ছিল। নতুন করে বরাদ্দ না আসায় এর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ইউএনও মো. ওয়ালীউল হাসান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভাবের কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে জানান, খাদ্য অধিদফতরের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওএমএসের কার্যক্রম চালু করা হবে।
এদিকে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ড. মো. মুশফিকুর রহমান জানান, জেলার মোট ৭২টি ওএমএসের ডিলারের মাধ্যমে চাল বিক্রি চালু ছিল। মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরীতে প্রতি ইউনিয়নে একজন করে ডিলার রয়েছেন। তারা নিয়মিত চাল বিক্রি করছেন। সেন্টারের নির্দেশে জেলার বাকি উপজেলায় ওএমএসের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার উচিতপুর ঘাটে গত ২৫ এপ্রিল ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাঞ্চল পরিদর্শন করে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এমপি এক কৃষক সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছিলেন, যারা ত্রাণ নেবেন না তাদের জন্য আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত ওএমএসের কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে চাল বিতরণ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
এমএএস/এমএস