রাজারহাটে ভাঙন কবলিতদের আহাজারি
তিস্তা নদীর ভাঙনে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়বখাঁ এলাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটার ধসে গেছে। ভয়াবহ ভাঙনে গত তিনদিনে প্রায় ৪৫টি বসতবাড়ি সরানো হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মন্দির, বাজারসহ দেড় শতাধিক বাড়ি-ঘর। ভাঙনকবলিতরা থাকার স্থান না পাওয়ায় আহাজারি করছে।
এলাকার মুদি দোকানদার আব্দুর রহিম জানান, তিস্তায় আবাদ-কিস্তি, বাড়ি-ঘর সব খায়া নিছে। লোকগুলার থাকপের জায়গা নাই। এই এলাকার রতি, সোলাগারী পশ্চিম মাথার বাসিন্দা আইজার রহমান (৬৫) ও হালিমা খাতুন (৪২) ৫ থেকে ৭ বার বাড়ি সড়িয়েছেন। তবু নদী যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। বাড়ি-ঘর নিয়ে কোথায় যাবেন এ চিন্তায় তারা অস্থির।
সরেজমিনে তৈয়বখাঁ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার ভয়াবহ রুদ্র রূপ। উজানে গাবুরহালান, মাজাপাড়া, রতি মৌজা, তৈয়বখাঁ, সোমনারায়ণ, রতিদেব গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে ভাঙন। তিস্তার মূল স্রোত এসব এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙনকবলিতরা নিরাপদ স্থানে ঘর-বাড়ি সড়িয়ে নিচ্ছে। পরিবারের লোকজনসহ গৃহস্থালি জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত। ভাঙনের কবলে পড়েছে তৈয়বখাঁ জামে মসজিদ, বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তৈয়বখাঁ সার্বজনীন মন্দির এবং তৈয়বখাঁ বাজারের প্রায় ৩৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
মসজিদের মেয়াজ্জেম আব্দুল হাই (৬৬) জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই মসজিদে আজান দিয়ে আসছি। কতজন এলো-গেল কিন্তু কাজের কাজ কেউ করল না। এই বৃষ্টি-বাদলার দিনে সরকারিভাবে নদীর গভীরতার চেয়ে কম দৈর্ঘ্যরে বাঁশ দিয়ে পাইলিং দিচ্ছে। এগুলা দিয়ে কিচ্ছু হবে না। শুকনা মৌসুমে স্থায়ী ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকার গরিব মানুষ আরও নি:স্ব হয়ে গেল।
তৈয়বখাঁ বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এলাকাবাসী চাঁদা তুলে ঢাকায় তদবির করে তৈয়বখাঁ বাজার রক্ষায় ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ এনেছে। দরপত্রও হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী ঠিকাদার এই কাজ ভাঙন প্রবণ তৈয়বখাঁ বাজারে না করে রতি মৌজার কাছে যেখানে ভাঙন কম সেখানে গিয়ে করছেন।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে ইউনিয়নের সত্তরভাগ এলাকায় ভাঙনে শতশত বাড়ি-ঘর বিলিন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। এবার তৈয়বখাঁ এলাকার হাট-বাজার, স্কুল, মসজিদ-মন্দিরসহ ঘর-বাড়ি বিলিন হবার যোগার। কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না। শুকনো মৌসুমে প্রটেকশনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বর্ষায় পাইলিং কতটুকু কাজে দিবে তা নিয়ে ভাঙন কবলিতদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। পাওয়া গেছে ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও গত বছর পাওয়া গেছে ৭ কোটি টাকা। এসব অর্থ দিয়ে জেলার ১০টি স্পটে কাজের জন্য দরপত্রের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
নাজমুল হোসেন/এমএএস/এমএস