ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘থাকপের জায়গা নাই, ঈদ করমো কীভাবে’

প্রকাশিত: ০৬:১৩ এএম, ২২ জুন ২০১৭

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়বখাঁ এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে চলছে তিস্তা নদীর ভাঙন। ভয়াবহ ভাঙনে গত তিন দিনে প্রায় ৪৫টি বসতবাড়ি সড়ানো হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মন্দির, বাজারসহ প্রায় দেড়শ বাড়িঘর।

সরেজমিনে তৈয়বখাঁ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গাবুরহালান, মাজা পাড়া, রতি মৌজা, তৈয়বখাঁ, সোমনারায়ণ, রতিদেব গ্রাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে তিস্তার ভাঙন। তিস্তার মূল স্রোত এসব এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন কবলিতরা নিরাপদ জায়গায় ঘরবাড়ি সড়িয়ে নিচ্ছেন। পরিবারের লোকজনসহ গৃহস্থালি জিনিসপত্র সড়াতে ব্যস্ত রয়েছেন। ভাঙনের কবলে পড়েছে তৈয়বখাঁ জামে মসজিদ, বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তৈয়বখাঁ সার্বজনীন মন্দির এবং তৈয়বখাঁ বাজারের প্রায় ৩৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ওই এলাকার মুদি দোকানদার আব্দুর রহিম বলেন, হামারগুলার ঈদ এবার শ্যাষ বাহে। তিস্তায় আবাদ, কিস্তি, বাড়িঘর সউগ খায়া নিছে। লোকগুলার থাকপের জায়গা নাই, ঈদ করমো কীভাবে?

kurigram

এই এলাকার রতি, সোলাগারী পশ্চিম মাথার বাসিন্দা আইজার রহমান (৬৫) ও হালিমা খাতুন (৪২) ৫ থেকে ৭ বার বাড়ি সড়িয়েছেন। তবু নদী যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। বাড়িঘর নিয়ে কোথায় যাবেন এ চিন্তায় তারা অস্থির।

মসজিদের মেয়াজ্জিন আব্দুল হাই (৬৬) বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই মসজিদে আজান দিয়ে আসছি। কতজন এল-গেল কিন্তু কাজের কাজ কেউ করল না। এই বৃষ্টি-বাদলার দিনে সরকারিভাবে নদীর গভীরতার চেয়ে কম দৈর্ঘ্যের বাঁশ দিয়ে পাইলিং দিচ্ছে। এগুলা দিয়ে কিচ্ছু হবে না। শুকনা মৌসুমে স্থায়ী ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকার গরীব মানুষ আরও নিস্ব হয়ে গেল।

দিনমজুর আজিজুল ইসলাম ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য ঘর সড়িয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, তৈয়বখাঁ বাজারের পাশে ৬টি বাড়ি, ৫টি দোকান এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। গত কয়েক দিনে নুরজামাল, সুরতজামাল, রফিকুল বাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। নদীর ধারে অবস্থিত ঘরবাড়ি অনেকে সরাতে পারছে না জায়গার অভাবে।

এদের মধ্যে দিনমজুর রেজাউল বলেন, আমার বাড়ি-ঘর ভাঙি যাচ্ছে। ঘর তোলার জাগা নাই। কেউ জাগা দেয় না। যার বাড়ি যাই কয় জাগা নাই। এখন পরিবার নিয়া ঢাকা যাওয়া ছাড়া উপায় নাই।

kurigram

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভাঙন কবলিত তৈয়বখাঁর ২৫০ মিটার এলাকায় অস্থায়ী তীর প্রতিরক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে পাইলিং ও জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে।

তৈয়বখাঁ বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এলাকাবাসী চাঁদা তুলে ঢাকায় তদবির করে তৈয়বখাঁ বাজার রক্ষায় ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ এনেছে। দরপত্রও হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী ঠিকাদার এই কাজ ভাঙন প্রবণ তৈয়বখাঁ বাজারে না করে রতি মৌজার কাছে যেখানে ভাঙন কম সেখানে গিয়ে করছেন।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ইউনিয়নের সত্তর ভাগ এলাকায় ভাঙনে শতশত বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। এবার তৈয়বখাঁ এলাকার হাট-বাজার, স্কুল, মসজিদ-মন্দিরসহ ঘরবাড়ি বিলীন হবার যোগার। কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না। শুকনো মৌসুমে প্রটেকশনের ব্যবস্থা গ্রহন না করে বর্ষায় পাইলিংয়ের কাজ কতটুকু কাজে দিবে তা নিয়ে ভাঙন কবলিতদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। পাওয়া গেছে ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও গত বছর পাওয়া গেছে ৭ কোটি টাকা। এসব অর্থ দিয়ে জেলার ১০টি স্পটে কাজের জন্য দরপত্রের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

নাজমুল হোসাইন/আরএআর/আরআইপি