ট্রেনে চেপে ১২ ভারতীয় হনুমান রাজশাহীতে
ভারত থেকে আসা পাথরবাহী ট্রেনে চেপে রাজশাহীতে এসেছে ১২টি হনুমান। শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসে ট্রেনটি। পরদিন শনিবার ভোরে ট্রেনটি রাজশাহী আসার পথে শিতলাই স্টেশনে দাঁড়িয়ে আরেকটি ট্রেনকে সাইড দিচ্ছিলো। ওই সময় পাথরবাহী ট্রেনের এক কামরা থেকে একে একে বেরিয়ে আসে ১২টি হনুমান।
পরে হনুমানগুলো চলে যায় আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামে। এখন হনুমানগুলো পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রায় বিপন্ন প্রজাতির এ হনুমানগুলো দেখতে রীতিমতো ভিড়ও জমে যাচ্ছে এলাকায়।
পবার দামকুড়াহাট এলাকার রবার্ট মুর্মুর বাড়িতে গিয়ে চারটি হনুমান দেখা গেছে। একটি হনুমান বসে ছিল তার বাড়ির টিনের উপরে। রবার্ট জানান, গ্রামের কয়েকটি বাড়ি ঘুরে হনুমানগুলো তার বাড়িতে এসেছে। গ্রামে আসার পর থেকে রবার্ট হনুমানগুলোকে খাবার দিচ্ছেন।
রবার্ট বলেন, কলা, পাউরুটি ও পানি দিচ্ছি। সবই খাচ্ছে। ক্ষুধার্ত এসব হনুমান গ্রামে আসার পর থেকেই খাবার পাচ্ছে অনেক। গাছে গাছে পাকা আমও খাচ্ছে নিজেদের মতো করে। লোকজন দেখার জন্য আসছে গ্রামে। শহর থেকেও লোক আসছে হনুমান দেখতে। কেউ কেউ বিরক্ত করছে এগুলোকে।
রবার্ট মুর্মুর জানালেন, অতিথি হনুমানগুলোকে কেউ যাতে বিরক্ত না করে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে তিনি স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইব্রাহিমের সাহায্য চেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পবার শিতলাই, কাদিপুর, রায়পাড়া ও গোদাগাড়ীর আলোকছত্র গ্রামে আরও ৮টি হনুমান অবস্থান করছে। আলোকছত্র গ্রামের ফিরোজ কবির বলেন, হনুমানগুলোর মুখ কুচকুচে কালো। কেউ কাছে গিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করলেই দাঁত খিচিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। তবে এ গ্রামটি হনুমানগুলোর পছন্দ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
শিতলাই গ্রামের মজিবর রহমান বলেন, শুক্রবার ভোরে বাড়ির সামনে বসে ছিলাম। তখন রেললাইনে একটি ট্রেনকে ক্রস করার জন্য ভারত থেকে আসা পাথরবাহী ট্রেনটি শিতলাই স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় একটি খালি বগি থেকে এক সঙ্গে নেমে এল ১২টি হনুমান। তারপর এগুলো বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে গেছে।
এ গ্রামের আবদুর রাকিব জানালেন, রহনপুর স্থলবন্দর দিয়ে ট্রেনযোগে ভারত থেকে পাথর আমদানি করে বাংলাদেশ। পাথরের ট্রেনে চড়ে মাঝে মাঝেই ভারতীয় হনুমান এসব এলাকায় আসে। বিরক্ত হলে আবার চলে যায়। উপযুক্ত পরিবেশ এবং খাবারের অভাবে ভারত থেকে আসা হনুমান মারাও যায় মাঝে মাঝে। কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করে না বন বিভাগ।
শুক্রবার পবার গোহামাবোনা এলাকা থেকে একটি হনুমান উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন রাজশাহী বনবিভাগের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এলাকার এক ব্যক্তি একটি হনুমান আটকে রেখেছিলেন। খবর পেয়ে তারা গিয়ে সেটি উদ্ধার করেন। পরে হনুমানটি প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করা হয়।
হনুমানগুলোর গতিবিধি নজরদারির ভেতর রয়েছে বলে জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, হনুমানগুলো এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে চলে যাচ্ছে। দলগতভাবে চলাচল করছে তারা। আপাতত তাদের কোন সমস্যা নেই। স্থানীয়দের এবিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও রাজশাহী বিভাগীয বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেনের মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী বন সংরক্ষক একেএম রুহুল আমিন বলেন, তারা এনিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর/জেআইএম