ঈদ আনন্দ স্পর্শ করে না তাদের
‘আমাদের সীমান্ত এলাকার মানুষের কোনো ঈদ আনন্দ নেই। প্রতিদিন কিভাবে দু’মুঠো ভাত খাবো সেটাই বড় চিন্তার বিষয়। বাজারে চালের কেজি ৫০-৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই চাল কিনবো না ঈদে পরিবারের সদস্যদের কিছু কিনে দিব সেটি নিয়ে কখনো ভাবি নাই। ঈদ তো শুধু বড়লোকদের জন্যই।’
ঈদের ভাবনা নিয়ে এভাবেই কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমাজানখোর এলাকার সখিনা বেগম।
ঠাকুরগাঁও জেলায় ৮০ ভাগ মানুষই প্রত্যক্ষও পরোক্ষ ভাবে কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে ৭৫ ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষের বসবাস গ্রামাঞ্চলে। গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রায় ঈদ বা কোনো উৎসব আমেজই লক্ষ্য করা যায় না। ফলে সমাজের একটা বড় অংশই ঈদ বিনোদনের বাইরে থেকে যায়।
ঠাকুরগাঁওয়ে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ঈদ উৎসব বাড়তি আনন্দ নিয়ে আসতে পারেনি। অর্থের অভাবে নতুন জামা-কাপড় কিনতে পারেনি খেটে খাওয়া নানা পেশার মানুষ। সামান্য সেমাই-চিনি কিনতে গিয়েই তাকিয়ে থাকতে হয়েছে স্থানীয় মুদি দোকানদারদের মুখের দিকে তার করুণালাভের প্রত্যাশায়।
উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের বাজারমূল্য কম থাকার কারণে বাজার থেকে বাড়তি দামে কোনো জিনিসই কিনতে পারেনি গ্রামের সাধারণ মানুষ। কিছুটা স্বচ্ছল মানুষের ঈদের আনন্দও মাটি করে বিভিন্ন সামাজিক বাধা।
নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে প্রতিবারই ঈদের আনন্দ, বিনোদন কিংবা ঈদ উৎসব পার হয় দুঃখ-বেদনায়। তাই বুকভরা চাপা যন্ত্রণা নিয়েই প্রতিবারই তারা ঈদ পালন করেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর এলাকার মিজানুর ইসলাম (৭০) জানায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী চিত্রটা বেশ পুরনো। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রতিশ্রুতি ছিল বাজার নিয়ন্ত্রণে কিংবা বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ ক্ষেত্রে এত কিছুর পরও সামান্য সফলতাও লক্ষ্য করা যায়নি। সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অসাধু ব্যবসায়ী চক্র, যা সিন্ডিকেট নামেই অভিহিত হচ্ছে, তারা সরকারি-বেসরকারি তরফের নজরদারির পরও নিজেদের স্বার্থটা হাসিল করে নিচ্ছে অধিক মুনাফা লাভে লোভের বশবর্তী হয়ে।
একই এলাকার কুদ্দুস আলী জানান, আমরা গ্রামের মানুষ শুধু কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ফসলের উৎপাদিত মূল্য পায় না। অপরদিকে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরাজমান বাজারের উত্তাপ এখনো অব্যাহত। যা এবারের ঈদে সাধারণ মানুষের জন্য অনেকটাই কষ্টের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদ ব্যাপারটা মূলত ছোটদের। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা ঈদ আনন্দে উদ্বেলিত হয়। বড়দের কাছে ঈদ যেন শৈশব-কৈশোরের আনন্দের স্মৃতি।
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শামীম হোসেন জানান, দেশের মানুষ অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। বড় লোকেরা দিনদিন টাকার পাহাড় গড়ছে আর গরিবরা আরো গরিব হচ্ছে।
ঈদে মা, বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবার জন্যেই নতুন পোশাক, জামা-জুতা কেনা বড় এক অনুষঙ্গ। এই ঈদে আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশী এবং গরিব-দুঃখী মানুষকে জামা-কাপড় উপহার দেয়াসহ তাদের পাশে দাঁড়ানোটাও সমাজের ধর্মীয় চেতনার বড় অংশ।
এফএ/পিআর