ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কিছুক্ষণ বাঁচাও বাঁচাও আর্তি

প্রকাশিত: ১২:১২ পিএম, ১৫ জুন ২০১৭

রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-আঞ্চলিক সেন্টারে খোলা কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন পাহাড়ধসে নিহত লিটন মল্লিকের স্বজনরা। মঙ্গলবারের পাহাড়ধসে ভূ-গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তাদের বাড়িঘর। বিধ্বস্ত হয়েছে বসতভিটা। পাহাড়ধসে মাটিচাপায় নিহত হয়েছেন লিটন মল্লিক (২৫), স্ত্রী চুমকি মল্লিক (২২) ও ছেলে আইয়ুশ মল্লিক।

নিহত লিটন মল্লিক রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর সনাতন পাড়ার বাসিন্দা গোপাল মল্লিকের ছেলে।

স্বজনসহ বাড়িঘর হারানো নিহত লিটন মল্লিকের বড় ভাই রূপন মল্লিক বলেন, আমার ছোট ভাই, তার স্ত্রী ও শিশু ছেলেটি বাঁচার জন্য চিৎকার করে কত আকুতি করেছিল। কিন্তু ওই সময় পরিস্থিতি এমন যে শুধু কানে শোনা ছাড়া আমাদের কিছুই করার উপায় ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধ ঘরে মাটি চাপায় মৃত্যু হয় তাদের।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়িঘরের আর কোনো অস্তিত্বই নেই। পাহাড়ের মাটিচাপায় বিলীন হয়ে গেছে। বাড়িঘর তো হারিয়েছি, যদি প্রিয় স্বজনদের বাঁচাতে পারতাম তাহলে শান্তি পেতাম।

rangamati

রূপন মল্লিক বলেন, মঙ্গলবার ভোর প্রায় ৫টার দিকে হঠাৎ একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। তাৎক্ষণিক পাশের পাহাড় ধসে পড়তে থাকে আমাদের বাড়িঘরের ওপর। অল্পক্ষণের মধ্যেই গোটা ঘরটি মাটির চাপায় পড়ে যায়। তখন বাবাসহ চারজন পুরুষ, চারজন নারী ও তিন শিশু মিলে আমরা মোট ১১ জন ছিলাম ঘরে। সামনের রুমে যারা ছিলাম তাৎক্ষণিক লাফিয়ে খুব কষ্টে বের হতে পেরেছি। কিন্তু ততক্ষণেই পেছনের রুমে থাকা আমার ছোট ভাই লিটন, তার স্ত্রী ও ছেলে পাহাড় ধসের মাটির চাপায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি তখনই এমন ভয়াবহ রূপ নেয় যে তাদের উদ্ধারের কোনো উপায় বা পথ খোলা ছিল না। কিছুক্ষণ ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আর্তি শুনতে পাই। পরে সব মিলিয়ে যায়। এর প্রায় ছয় ঘণ্টা পর বেলা ১১টার দিকে উদ্ধারকর্মীরা তাদের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে।

রূপন মল্লিক বলেন, এখন আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। কিন্তু খুব মানবেতর অবস্থা। এখানে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে কিন্তু পানি নেই। বিদ্যুৎ তো নেই-ই। এখানে পানি না থাকায় ধোয়া, গোসলসহ খুব সংকট। খাবার পানিও মিলছে না। সব হারিয়ে সর্বশান্ত আমরা। জানি না কী হবে কোথায় যাব।

শুধু রূপন নয়, রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনা কেড়ে নিয়েছে শতাধিক তাজা প্রাণ। মাটির চাপায় অনেকের পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। মাটির চাপায় বিলীন হয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি। বাড়িঘরহারা এসব লোকজনের প্রায় সবাই আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। তারা এখন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারিভাবে ত্রাণ ও খাবার বিতরণ করা হলেও বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ না থাকায় অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন দুর্গতরা।

rangamati

শহরের ভেদভেদীর বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, তার কেন্দ্রে দেড় শতাধিক পরিবারের প্রায় ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে পরিবেশ নাজুক হয়ে উঠেছে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এখানে আশ্রয় নেয়া লোকজন। এ সংকট দ্রুত মোকাবেলা করা দরকার।

এদিকে, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। সেনাবাহিনীর পক্ষে সদরসহ প্রতিটি জোনে সব মিলে ১১শ’ সেনা সদস্য উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুক, মেজর রাকিবুল ও মেজর তানভীর উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উদ্ধার ও ত্রাণ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মা. খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত জানান, উদ্ধার কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়ে রাঙামাটি শহরে ১৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ সব আশ্রয় কেন্দ্রে এ পর্যন্ত এক হাজার ৯০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আরএআর/জেআইএম

আরও পড়ুন