শুধু রাঙামাটিতে নিহত ৩৭, উদ্ধার তৎপরতা চলছে
নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বর্ষণের পর পাহাড়ধসে রাঙ্গামাটি শহর, কাপ্তাই এবং কাউখালীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত ৩৭ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এখনও বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার অভিযান চলছে। নিহতদের মধ্যে দুই সেনা কর্মকর্তাসহ ছয়জন রয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে এ মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। দুপুর পর্যন্ত রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ১৪ জনের মরদেহ আনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা. সহীদ তালুকদার।
হাসপাতাল ও স্থানীয় একাধিক নির্ভযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, প্রবল বর্ষণে বাড়িঘরে পাহাড়ের মাটিচাপায় রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার, ভেদভেদী, শিমুলতলী, মোনঘর, রাঙামাটি ও মানিকছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ২০ জন, কাউখালীর বেতবুনিয়ায় চারজন, ঘিলাছড়িতে তিনজন, কাশখালীতে তিনজন এবং কাপ্তাই রাইখালীর কারিগর পাড়ায় চারজন নিহত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে মানিকছড়িতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড় থেকে ধসে পড়া মাটি অপসারণের সময় ছয় সেনা সদস্য নিহত হয়। তারা হলেন মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর আহমেদ, সিপাহী আজিজ, শাহীন, ল্যান্স কর্পোরেল আজিজ, সিপাহী মামুন।
এছাড়া আরও বেশ কয়েক জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাঙামাটি এবং ঢাকার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সকাল ১১টার দিকে হতাহত সেনা সদস্যরা মানিকছড়িতে রাস্তার ওপর ধসে পড়া মাটি অপসারণে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। ওই সময় আকস্মিক পাশের একটি উঁচু পাহাড় ধসে পড়ে মাটিচাপা পড়েন তারা।
নিহতদের মধ্যে যাদের মরদেহ রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তারা হলেন, রুমা আক্তার (২৫), নুর আক্তার (৩), হাজেরা (৪০), সোনালি চাকমা (৩০), এক বছর বয়সী শিশু অমিয় কান্তি চাকমা, আইয়ুশ মল্লিক (২), চুমকি মল্লিক (২), লিটন মল্লিক (২৮), অজ্ঞাত (২২), মিন্টু ত্রিপুরা (৪৫), আবদুল আজিজ (৫৫), অজ্ঞাত (৩২), মিলি চাকমা (৫৫), ফেন্সি চাকমা (৪)।
এছাড়া কাউখালীর যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন, ফাতেমা বেগম (৬০), মনির হোসেন (২৫), মো. ইসহাক (৩০), দবির হোসেন (৮৪), খোদেজা বেগম (৬৫), অজিদা খাতুন (৬৫), মংকাচিং মারমা (৫২), আশেমা মারমা (৩৭), শ্যামা মারমা (১২), ক্যাচাচিং মারমা (৭), কুলসুমা বেগম (৬০), বৈশাখী চাকমা (১০), লায়লা বেগম (২৮)।
কাপ্তাই রাইখালীর কারিগর পাড়ায় নিহত চারজনের নাম তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি। এর আগের দিন সোমবার রাঙামাটি শহরের পুলিশ লাইন এলাকায় এক শিশু এবং কাপ্তাইয়ের নতুন বাজারে এক শিশু পাহাড়ের মাটি চাপায় মারা যায়।
জেলা প্রশাসন থেকে জেলায় মোট ৩৫ জনের নিহতের তালিকা পাওয়া গেছে বলে জানান, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর তাপস দাশ।
রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, শহরসহ রাঙামাটির আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তারা। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে জেলা প্রশাসন থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। এ জন্য শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ১৬ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অনেকেই ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে গেছেন, রাঙামাটির সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মঙ্গলবার বিকেলে জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন।
সুশীল প্রসাদ চাকমা/এএম/পিআর