ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

খুলনায় জমজমাট অনুমোদনহীন আবাসন ব্যবসা

প্রকাশিত: ০৫:৩১ এএম, ১৬ মে ২০১৫

খুলনা মহানগরী ও নগরীর বাইরে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাস্টার প্ল্যানের আওতাধীন এলাকায় অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠছে একের পর এক আবাসন প্রকল্প ও ফ্ল্যাট ব্যবসা। চটকদারি বিজ্ঞাপন আর বাহারি সাইনবোর্ড দিয়ে এসব প্রকল্পের জমি ও ফ্ল্যাট কিনতে আকৃষ্ট করা হচ্ছে ক্রেতাদের। অপরিকল্পিতভাবে আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠলেও ভবিষ্যতে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ব্যাঘাত সৃষ্টি, পরিবেশ বিপর্যয় ও জননিরাপত্তাসহ নানা ধরনের সমস্যার সম্ভাবনা রয়েছে।

কেডিএ পরিকল্পনা বিভাগ সূত্র জানায়, সংস্থার মাস্টার প্ল্যানের অধীনে রয়েছে মহানগরীর উত্তরে যশোরের নওয়াপাড়া পৌর এলাকার উত্তর সীমানা, দক্ষিণে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী, পূর্বে রূপসা উপজেলার সম্পূর্ণ অংশ ও পশ্চিমে ডুমুরিয়া উপজেলার কৈয়াবাজার পর্যন্ত এলাকা। এসব এলাকার মধ্যে কোনো ধরনের আবাসিক প্রকল্প গড়ে তুলতে কেডিএর অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু অর্ধশতাধিক আবাসন প্রতিষ্ঠান এবং শতাধিক বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট অনুমোদন না থাকলেও তারা প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রি করছে।

কেডিএর সহকারী টাউন প্ল্যানার মো. তানভীর আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুযায়ী আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলতে প্রাথমিকভাবে উদ্যোক্তা ও পরামর্শক নিবন্ধন করতে হয়। যার জমি তিনি হচ্ছেন উদ্যোক্তা এবং পরামর্শক (বিশেষজ্ঞ) হচ্ছেন পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি। এরপর ট্রেড লাইসেন্স (ব্যবসার অনুমতিপত্র), করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) নিবন্ধন নম্বর লাগবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন থাকতে হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কেডিএর আওতাধীন এলাকায় গুলজান সিটি, হানিফ মোহাম্মদ আবাসন প্রকল্প, খানজাহান নগর আবাসন প্রকল্প, আরাফাত আবাসন প্রকল্প, মাদানীনগর, রাজদীপ, ন্যাশনাল, মহানগর আবাসন প্রকল্প, অর্পিতা হাউজিং প্রকল্প, মাদানী সোসাইটি, আশিকনগর, সাউদ বাংলা, শান্ত নীড় হোল্ডিং রিয়েল এস্টেট প্রকল্প, যুবক হাউজিং রিয়েল এস্টেট নামে নগরীর রূপসা ও লবণচরা এলাকায়ও বেশ কিছু আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছে ২, ৩, ৫ ও ১০ কাঠার প্লট বিক্রি করছে। এসব প্রকল্পের কেডিএর অনুমোদন আছে কিনা, তা না জেনেই অনেকে প্লট কিনছেন। অধিকাংশ প্রকল্পে যে পরিমাণ প্রশস্ত সড়ক থাকার কথা তাও নেই। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কোন কিছুই নেই বললেই চলে।

অনুরূপভাবে আইন লঙ্ঘন করেই চলছে ফ্ল্যাট ব্যবসায়ীরা। জিরো পয়েন্ট এলাকায় গড়ে ওঠা কাদের হাউজিং প্রকল্প, হানিফ মোহাম্মদ আবাসন প্রকল্প, বটিয়াঘাটার নিজখামার এলাকার মহানগর আবাসন প্রকল্প, মাদানীনগর আবাসন প্রকল্প, অর্পিতা হাউজিং প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ-ছয় একর জমি নিয়ে ছোট ছোট আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলে প্লট বিক্রি চলছে। একাধিক আবাসন প্রকল্পের মালিকরা স্বীকার করছেন, খুলনার কোন আবাসন প্রকল্প কেডিএর কাছ থেকে কোনো অনুমোদন নেয়নি। বাসাবাড়ি নির্মাণের অনুমোদন নিয়ে নির্মিত ভবনগুলোতে ফ্ল্যাট ব্যবসা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

কেডিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, কৌশলে দু`একজন ব্যক্তি বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংস্থাকে ম্যানেজ করে অবৈধ প্রকল্পের অনুমোদন নেয়ার তদবির করছেন। অবৈধ আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠার বিষয়ে কেডিএ দায় এড়াতে পারে না।
 
কেডিএর প্রধান প্রকৌশলী এটিএম ওয়াহিদ আজহার জাগো নিউজকে বলেন, কেডিএর মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ও অনুমোদিত আবাসন এলাকায় জমি বা প্লট কিনলে স্থাপনা তৈরি করতে নানা ধরনের আইনি জটিলতায় পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। জনগণ যাতে প্রতারিত না হন, সেজন্য আবাসন প্রকল্পের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও উদ্যোক্তাদের আইন ও বিধি মানার আওতায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেট স্কুলের সাবেক ডিন এবং নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ফ্ল্যাট ব্যবসা করতে রিহ্যাবের নীতিমালা মানতে হবে। খুলনাতে আবাসন প্রকল্পগুলো ইচ্ছেমতো গড়ে উঠছে। নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট রাস্তা, খেলার মাঠ, পার্ক বা বিনোদনের স্থান নেই তাদের। কয়েকটিতে তো জলাশয়ে বালু ভরাট করেই আবাসন প্রকল্প বানিয়েছে। এগুলো কেডিএর দেখার দায়িত্ব। ভবিষ্যতে নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টির দায়-দায়িত্ব কেডিএ এড়িয়ে যেতে পারে না।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. দিলীপ দত্ত জাগো নিউজকে বলেন, অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্পের কারণে ভবিষ্যতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। পানির প্রবাহ আছে কিনা ও সংশ্লিষ্ট এলাকার মাটির অবকাঠামো ধারণ করার ক্ষমতা আছে কিনা, সেটা যাচাই করে দেখতে হবে। যেভাবে খাল, বিল ও জলাশয় ভরাট করে প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে তাতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা ও ভূমিকম্পনে ধসের মতো ভয়াবহতাও দেখা দিতে পারে।

আলমগীর হান্নান/এমজেড/এমএস