ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এনজিও আরডিপি

প্রকাশিত: ০৫:১৫ এএম, ১৬ মে ২০১৫

আরডিপি ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এমসি এস লি. নামের একটি সমবায় সমিতি মাদারীপুরের শিবচর থেকে অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে ১০ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। সংস্থাটির মূল লক্ষ্য ছিল পদ্মা সেতু হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ নারী-পুরুষ।

সুদকে হারাম বলে ধর্মীয় লেবাসে ব্যবসায় অংশীদারীত্ব দেয়ার নামে মাসে লাখ প্রতি ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা মুনাফা প্রদানসহ বিভিন্ন প্রকল্পে অতি মুনাফা দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় টাকা। বর্তমানে মুনাফা দেয়া বন্ধ থাকায় গ্রাহকদের মাঝে নেমে এসেছে চরম হতাশা। গ্রাহকরা দিন-রাত ভিড় করছেন এনজিওটির কার্যালয়ে।

এলাকাবাসী জানান, শিবচর পৌর এলাকার সদর রোডের আমিন গোমস্তা সুপার মার্কেটের দ্বিতল ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে আরডিপি ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এমসিএস লিমিটেড নামের সংস্থাটি শিবচরে উপজেলা ব্যাপী কার্যক্রম শুরু করে। সমবায় অধিদফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন নেয় সংস্থাটি। মোট ৯টি প্রকল্পের ১৫টি ক্যাটাগরিতে সংস্থাটি আমানত সংগ্রহ করে। ধর্মীয় লেবাসে মাসে লাখ প্রতি ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা মুনাফা প্রদান, এককালীন জমায় ৫ বছরে দ্বিগুণ ও ৭ বছরে ৩ গুণ মুনাফার লোভসহ বিভিন্ন প্রকল্পে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে অবিশ্বাস্য অফার।

দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ছাড়াও শিক্ষা প্রকল্প, হজ্জ প্রকল্প, বিশেষ বন্ড, ল্যান্ড বন্ড প্রকল্পেও দেয়া হয়েছে অতি লোভনীয় অফার। শিবচরের প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১০ কোটিরও বেশি টাকা। এর বিপরীতে ঋৃণ দিয়েছে মাত্র ৪৫ লাখ টাকা।

শিবচর আরডিপি অফিস সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া মাদবরচর ইউনিয়নের উত্ত বাখরকান্দি গ্রামের মো. সামসু শেখের ১১ লাখ, সোনা বানের ৪ লাখ, তার ছেলে মফিজ মিয়ার ২ লাখ, সেলিম শেখের ১৫ লাখ,জনৈদ্দিন শেখের ১০ লাখ, জাসিম মাতবরের কাছে ১০ লাখ,  খলিল মাদবরের ২ লাখ, শাহীন মোড়লের সাড়ে ৩ লাখ, আলী মোড়লের ৫ লাখ, হাজী আনেজ মোড়লের ৫ লাখ, হাসেম মোড়লের ৫ লাখ ও আলমগীর মোড়লের আড়াই লাখ।

তারা সকলেই পদ্মা সেতুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সরকারের কাছ থেকে এককালীন টাকা পান। তাদের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য শিবচর উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর শাজাহান মাওলানাসহ আরও অনেকে টাকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে কৌশলে আরডিপি অফিস তাদের টাকা জমা রাখতে পরামর্শ প্রদান করে। এমনকি এলাকার জামাতের প্রভাবশালী জামাত নেতারা আরডিপির নিজস্ব এজেন্ট হিসেবে অফিস থেকে কমিশন গ্রহণ করেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া ভদ্রাসন জিসি একাডেমির প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন মিয়া ১ লাখ ৮০ হাজার, চরজানাজাত ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান মাহমুদ ১ লাখ, তার বোন লায়লা আক্তার, ১ লাখ, মাদবরচর আরএম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আতাউর রহমান ৬ লাখ, নাছিমা আক্তার ৪ লাখ, তাছলিমা বেগম ৪ লাখ এবং যাদুয়ার চর গ্রামের চেহারন বেগম ৭ লাখ ৩০ হাজার, শিবচর পৌর এলাকার স্বর্ণকার নির্মল পাল ২ লাখ ৫ হাজার টাকা জামানত রাখেন। এছাড়া  আরও শত শত গ্রাহক তাদের কষ্টার্জিত অর্থ অতি লাভের উদ্দেশ্যে এ আরডিপিতে জামানত রাখেন।

মূলত শিবচর উপজেলার মাদবরচর, কাঠালবাড়ি ও কুতুবপুর এলাকার পদ্মা সেতুর কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে ওই টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য একটি চক্র কাজ করে। সহজ সরল গ্রাহকদের অধিকাংশই নারী। প্রতিষ্ঠানটি গত ৩ মাস ধরে মুনাফা প্রদান বন্ধ থাকায় গ্রাহকরা এনজিওটির পালিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছে। দিনরাত ভিড় করছেন গ্রাহকরা। বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার মাসিক কিস্তি ও মূল টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর গত দুই দিন ধরে অফিস ঘেরাও করেন শত শত গ্রাহক।

অফিসের ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির মধ্যে ১০ জনই ইতোমধ্যে পালিয়ে যান। টাকা না পেয়ে হতাশ গ্রাহকরা। স্থানীয় প্রশাসন ও নেতৃবৃন্দ এনজিওটি নজরদারিতে নিয়েছে। নেয়া হচ্ছে আমানত, ঋণ প্রদান ও সম্পদের হিসাব। গ্রাহকরা চরম হতাশা ব্যক্ত করে দ্রুত টাকা ফিরেয়ে দেয়ার দাবি জানান।

শিবচর আরডিপি অফিস সূত্র  ও এলাকার গ্রাহকরা জানান, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইব্রাহীম খলিল নারায়ণগঞ্জ জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি। ধর্ম প্রিয় মানুষকে আকৃষ্ট করতে প্রচার করে `ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত` হচ্ছেন তারা। জামায়াত শিবিরের নেতৃত্বে পরিচালিত আরডিপিতে স্থানীয় জামায়াত ও শিবিরের নেতা কর্মীরা আরডিপির এজেন্টের হয়ে কাজ করেন। সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে জামানত সংগ্রহ করে ওই জামাত-শিবিরের নেতা কর্মীরা চড়া কমিশন নেন।

এদিকে আরডিপি শিবচর শাখার ১২ কর্মকর্তার মধ্যে ১০ জনই পালিয়ে গেলেও আরডিপির ম্যানেজার (বর্তমান) মো. রফিক মিয়া, আরডিপির এজিএম আদম শফিউল্লাহ এবং ক্যাশিয়ার এখন শিবচর অফিসে অবস্থান করে নিসেব নিরীক্ষা করছেন। গ্রাহকদের চাপের মুখে এখন ওই কর্মকর্তারা জানান, গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া টাকার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার কিছু বেশি। আরডিপির ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। গ্রাহকদের জামানতের টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে তারা দাবি করেন।

এ ব্যাপারে শিবচর উপেজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হুসাইন জাগো নিউজকে জানান, আরডিপির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

এ কে এম নাসিরুল হক/এমজেড/আরআই