নতুন পদ্ধতিতে আম চাষ, লক্ষ্য ১০ মেট্রিক টন
নওগাঁর পোরশায় ফ্রুট ব্যাগিং (বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগ দিয়ে আবৃত করা আম) পদ্ধতিতে আম চাষ করছেন চাষিরা। বিদেশে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যে এই প্রথম ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আম চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন। আম পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা ও কীটনাশকের প্রয়োজন হচ্ছে না। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি সফল হলে আগামীতে এর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন আম চাষিরা।
চীন থেকে আমদানিকৃত এ ব্যাগটি উপজেলায় প্রথম আমে পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে। এটি ব্যবহারের ফলে আম বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে। এতে আম নষ্ট কম হলে ফলনও বৃদ্ধি পাবে। এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে মানসম্পন্ন আম উৎপাদন সম্ভব। এতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োজন হবে না। মানসম্পন্ন আম বিদেশে রফতানি সহজ হবে।
আম চাষিরা স্বল্প খরচে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একশত ভাগ নিরাপদ এই আমগুলো সংগ্রহের পরে ১৫-২০ দিন সংরক্ষিত করে খাওয়া যাবে।
ইতোমধ্যে ব্যাগিং পদ্ধতির আম বিদেশে পাঠানোর জন্য পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ড. শরাফউদ্দিনর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার গাঙ্গুরিয়া, পলাশবাড়ি, তেঁতুলিয়া, ঘাটনগর, গবিরাকুড়ি, সোমনগরসহ কয়েকটি গ্রামে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করেছেন আম চাষিরা।
গাঙ্গুরিয়া গ্রামে আম চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, এই প্রথম আম বাগানে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি শুরু করেছি। প্রায় ৫ হাজার আশ্বিনা আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছি। বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদনের লক্ষ্যে উপজেলায় এই প্রথম ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি শুরু হয়েছে। আম পাড়ার পর ব্যাগটি ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হলে আগামী বছরও ব্যবহার করা যাবে।
ঘাটনগর গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রায় সাত বিঘা পরিমাণ আশ্বিনা আম বাগানে ২৪ হাজার ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন। প্রতিটি ব্যাগ প্রায় সাড়ে ৩ টাকা খরচ পড়েছে। এই ব্যাগটি দুইবার ব্যবহার করা যাবে। বর্তমানে আমাকে কোনো বাড়তি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। এ বছর ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্ত আম উৎপাদনে চাহিদা ও ভালো দাম পেলে আগামী বছর ব্যাগিং পদ্ধতি আরও বৃদ্ধি পাবে। এলাকার অনেক আম চাষি ব্যাগিং পদ্ধতি শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, এই প্রযুক্তির আম যুক্তরাজ্য, জার্মানি, মালয়েশিয়া, ইতালি, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হবে।
ঘাটনগর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, এই ইউনিয়নে প্রায় ১২ বিঘা জমির আম বাগানে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন আম চাষিরা। ব্যাগের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার। এটি একটি উন্নত পদ্ধতি। আম চাষিদের জন্য উপকারী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহবুবার রহমান বলেন, ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষের জন্য এবং এর প্রসার ঘটাতে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ ও সহায়তার উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। গত বছর এই উপজেলা থেকে প্রায় দুই মেট্রিক টন আম রফতানি করা হয়েছে। এবার ১০ মেট্রিক টন ব্যাগিং পদ্ধতির আম বিভিন্ন দেশে রফতানি হবে বলে আশা করছি আমরা।
এএম/জেআইএম