আ. লীগ নেতার ছেলের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করতেন হালিম
রাজধানীর বনানীর একটি আবাসিক হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সিরাজগঞ্জের হাসান মোহাম্মদ হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ তার বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের নাম ব্যবহার করতেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতারক হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গান্ধাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের ছেলের নাম ব্যবহার করতেন।
কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রতারক হালিম যে নাঈম আশরাফের নাম ব্যবহার করতেন, সেই নাঈম আশরাফ হচ্ছেন কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গান্ধাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের ছেলে। মূলত বিভিন্ন জায়গায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলামের ছেলের নাম ব্যবহার করতেন প্রতারক হালিম।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা গান্ধাইল গ্রামের আমজাদ হোসেন ফেরিওয়ালার ছেলে হালিম। ২০০৪ সালে এসএসসি পাশ করে বগুড়া পলিটেকনিকে ভর্তি হয়। সেখানেও নিজের বাবার নামসহ পুরো পরিচয় গোপন করে প্রতারণা করে এক মেয়ের সাথে। ধরা পড়ে গণপিটুনি খেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে নাম বদলে হয়ে যায় নাঈম আশরাফ। চাকরি নেয় এক মিডিয়া হাউজে। এরপর থেকেই দীর্ঘদিন তার কোনো যাতায়াত ছিলো না এলাকায়। হঠাৎ করেই নিজেকে কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি পরিচয় দিয়ে এলাকায় ব্যানার ফেস্টুন লাগায়। আর এতেই আবার নজরে আসে হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ। এই রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান পরিচয় নিয়ে নাঈম আশরাফ ঢাকার বিভিন্ন নারীদের সাথে প্রতারণা করে গড়ে তুলতেন শারীরিক সম্পর্ক। তবে তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সর্বশেষ ঢাকায় প্রতারক হালিম ওরফে নাঈম আশরাফের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নাঈম আশরাফের গ্রামের বাড়ী কাজিপুরের গান্ধাইলসহ তার বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে পারেননি পুলিশ।
এ বিষয়ে স্থানীয় গান্ধাইল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার জানান, হালিম প্রভাব বিস্তার ও প্রতারণার কাজটি সহজ করার জন্য কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলমের সন্তানের নাম ব্যবহার করেছেন। আমরা এই ধরনের প্রতারকের কঠিন শাস্তি দাবি করছি।
কাজিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমিত কুমার কুন্ডু জানান, সাধারণ ফেরিওয়ালার ছেলে হালিম নাম বদলে হয়েছেন নাঈম আশরাফ। প্রকৃতপক্ষে এলাকায় তিনি একজন প্রতারক হিসেবে পরিচিত। বাবার নাম পরিচয় বদলে বিয়ে করেছেন তিনটি। দুইজন স্ত্রী তার প্রকৃত পরিচয় জেনে সরে গেলেও এখন তৃতীয় স্ত্রী নিয়ে বসবাস করছেন ঢাকায়। আর কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগে কোন পদ না পেয়েও ব্যানার ফেস্টুনে ব্যবহার করছেন দলীয় নেতাদের ছবি ও পদবী।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এআরএস/জেআইএম