যেসব কারণে বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করা হলো
বোতল বাড়ি নির্মাণ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন এক দম্পতি। দেশের প্রথম প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক দম্পতি।
কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত নওদাবাস গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে রাশেদুল আলম ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন তৈরি করছেন এই বাড়িটি। ১৭শ স্কয়ার ফুট বাড়িটি তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। বাড়িটি তৈরিতে কোনো ইটের ব্যবহার করা হয়নি। আকর্ষণীয় ওই বাড়ি দেখতে দূর-দূরান্তের মানুষ ভিড় জমাচ্ছে।
জানা গেছে, রাশেদুল আলম ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন ঢাকার শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজে অস্থায়ীভাবে শিক্ষকতা করতেন। তাদের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রাফিদুল মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই শহরের কোলাহল ছেড়ে ও চিকিৎসকের পরামর্শে দূষণমুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেলেকে বড় করতে চলতি বছর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন তারা।
ফলে নিজেদের একটি বাড়ির প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে ইন্টারনেটের সাহায্যে স্বল্প খরচ আর পরিবেশবান্ধব বাড়ি তৈরির ফর্মূলা খুঁজতে থাকেন ওই দম্পতি।
জানতে পারেন পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ইকো হাউস নামে চমৎকার বাড়ি তৈরি করছেন জাপানিরা। স্বামী-স্ত্রী পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে বিষয়টি নিয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা। তবে শুরুতে অনেকেই তাদের ওই প্লাস্টিকের বোতলের তৈরি বাড়ি করা নিয়ে হাসি তামাশা করেছে ঠিকই, কিন্তু নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছপা হননি তারা।
প্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে মিস্ত্রি দিয়ে চালিয়ে যান বাড়ি তৈরির কাজ, যা বর্তমানে প্রায় শেষের দিকে। আর সেই বাড়ি এখন অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন দেখতে আসছেন। তখন গর্বে বুক ভরে যায় ওই দম্পতির। কারণ পরিবেশবান্ধব বাড়ি তৈরি করে এক সময় হয়তো দেশের মানুষের কাছে বোতল হাউসের উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত লাভ করতে পারেন রাশেদুল-আসমা দম্পতি।
১৭শ স্কয়ার ফুট বসত-ভিটায় চার রুমের থাকার ঘর দুটি, বাথরুম, রান্নাঘর ও বারান্দা তৈরিতে সর্বত্র বিভিন্ন সাইজের বোতল ব্যবহার করেছেন তারা। এমনকি বাথরুমের সেফটিং ট্যাঙ্ক ও মেঝেতে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাসটিকের বোতল। বাড়ির ভিত্তি মূলে ১ লিটার এবং দেয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে হাফ লিটার প্লাস্টিকের বোতল। প্লাস্টিকের বোতলে বালি ঢুকিয়ে তা ইট হিসেবে সিমেন্ট দিয়ে লাগানো হয় বাড়ির কাজে।
বোতলে বালি ব্যবহার করায় বোতল স্বাভাবিক ইটের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি শক্ত হয় বলে দাবি করেন বাড়ির মালিক রাশেদুল। ওই বালি গরমে তাপ শোষণ করে ঘরকে অপেক্ষাকৃত যেমন ঠান্ডা রাখবে, তেমনি অন্যান্য ইটের বাড়ি থেকে বেশ মজবুত আর শক্ত হবে বলে জানান তিনি।
বাড়ি তৈরিতে নিয়োজিত রাজমিস্ত্রি রুদ্রেশ্বর রায় বলেন, সারা জীবন মানুষকে ইট দিয়ে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। এবার প্লাস্টিকের বোতল দিয়া বাড়ি তৈরি করে দিতে খুবই ভালো লাগছে। তবে ওই বাড়ি তৈরির সব দিকনির্দেশনা মূলত রাশেদুল আর তার স্ত্রী আসমা খাতুন দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
বাড়ির মালিক রাশেদুল ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন জানান, তাদের এ বাড়ি করতে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার প্লাস্টিকের বোতল প্রয়োজন হয়েছে। তাই বোতল কিনেছেন ৬০ মণ। প্রতি কেজি বোতল প্রকারভেদে কিনতে হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। টিনের চালা বাদে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে বাড়ির পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন ওই দম্পত্তি। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ির কাজ শুরু করেন তারা। বর্তমানে প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক শেখ আব্দুল আলিম জানান, দেশে পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে যে বাড়ি করা যায়, তা রাশেদুলের এই বাড়িটি না দেখলে বিশ্বাস হতো না। তার এই বাড়িটি দেখে এলাকার অনেকেই উদ্ধুব্ধ হচ্ছেন আবার অনেকে তাদের কাছ থেকে বাড়ির নকশা করে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, স্বল্প খরচে তৈরি প্লাস্টিকের বোতলের বাড়িটি দেখে এসেছি। এটি পরিবেশবান্ধব।
রবিউল হাসান/এমএএস/এমএস