এ কী করলেন প্রধান শিক্ষক!
মোবাইল ফোনে অশ্লীল দৃশ্য ধারণের অভিযোগে ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলার কালামৃধা গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেনকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীত-অনিয়সহ নানা অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিন ধরে। তবে গত শনিবার স্কুলের সহকারী এক শিক্ষকের স্ত্রী’র গোসলের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ এবং তা ছড়িয়ে দেবার ঘটনার পর তোলপাড় শুরু হলে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি এ সিদ্ধান্ত নেয়।
এ ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে তোলপাড় চলছে। দায়ী শিক্ষকের বিচার দাবি করে একজোট হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, কালামৃধা গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছিল। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তায় তিনি এসব করলেও কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন তারই স্কুলের এক সহকারী শিক্ষকের স্ত্রী’র গোসল করার নগ্ন দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পরিবারসহ স্কুলের কোয়ার্টারে থাকতো। রোববার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে প্রধান শিক্ষক ভিডিও’র কথাটি অস্বীকার করে। কিন্তু, স্থানীয়রা প্রধান শিক্ষকের ছেলের মোবাইল ফোনে ধারণ করা দৃশ্যটি দেখে তাজ্জব বনে যান। এ নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
সোমবার সকালে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকসহ স্থানীয়রা স্কুল বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। এক পর্যায়ে তারা মালিগ্রাম-কালামৃধা আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রাখে। টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ভাংগা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। পরে ভাংগা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলগমীর হোসেন দায়ী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলেও কোনো কাজ হয়নি। পরে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি জরুরী সভা করে প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
কালামৃধা গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শফিকুর রহমান জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আমরা সাময়কি ভাবে প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করেছি। দোষী হলে অবশ্যই তাকে সাজা পেতে হবে।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষকের স্ত্রী জানান, যা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমি এখন মুখ দেখাতে পারছিনা। শুনেছি ভিডিও অনেকের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে।
গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দেব দুলাল জানান, প্রধান শিক্ষক যে কাণ্ড করেছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে করে কেউ কোনোদিন এমন কাজ করতে না পারে। যারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানুষ করার কারিগর তারা যদি ভালো না হয় তাহলে তাদের কাছ থেকে আগামী দিনের ভবিষ্যতেরা কি শিক্ষা পাবে।
ভাংগা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল ইসলাম বলেন, স্কুলে আমি গিয়েছিলাম। অভিযোগ শুনে মনে হয়েছে বিষয়টি বেশ গুরুতর। অভিযোগ পেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভাংগা থানা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। থানা পুলিশকে ঘটনার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে। আপাতত প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, স্থানীয়দের সাথে বিরোধ থাকার কারণে তাকে হেনস্তা করতেই এমন ঘটনা সাজানো হয়েছে।
কামরুজ্জামান/এমএএস/আরআইপি