ভৈরবে কেজিতে ৫-৭ টাকা বেড়েছে চালের দাম
বোরো মৌসুমে নতুন ধান কাটা শুরু হলেও হাওরের ফসল পানিতে নষ্ট হওয়াই বন্দর নগরী ভৈরব বাজারে ধানের আমদানি কমেছে। ফলে নতুন ধানের দাম কমছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চালের দাম। সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা।
নতুন ধান আমদানি হলেও বাজার চালের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। বৃহস্পতিবার ভৈরব বাজারে বি আর-২৮ ও বি আর- ২৯ চিকন চাল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজারের বিভিন্ন চালের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে দেশী জাতের স্বর্ণা কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে ৩৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অটো মিলের স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকায়। এছাড়া রত্না ৩৯, নাজিরশাইল ৩৬, মিনিকেট ৪৫ ও পাইজাম ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এসব চাল প্রকারভেদে ৩-৫ টাকা কম দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে মোটা চালের দাম ৪১ টাকা থেকে ৪৪ টাকা দরে রয়েছে।
এর আগে প্রতি বছর বৈশাখ মাস আসলেই ধান ও চালের দাম কমতে শুরু করতো। কিন্তু এবার কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেটসহ হাওরের ৫টি জেলায় বোরো ধান পানিতে নষ্ট হওয়াই ধান আমদানি কমে গেছে।
বর্তমানে ভৈরব বাজারে প্রতি মণ ধান ৬০০ টাকা থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে নষ্ট হওয়া ভেজা ধান প্রকারভেদে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে আড়তদাররা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওর এলাকার অধিকাংশ ধান প্রতি বছর বন্দর নগরী ভৈরব বাজারে আমদানি হতো। আর এসব আমদানিকৃত ধান মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম, চাদঁপুর, চট্টগ্রামসহ স্থানীয়ভাবে রাইস মিলগুলোতে বিক্রি হতো।
গত বছর বৈশাখ মাসে প্রতিদিন অসংখ্য নৌকা থেকে ১৫-২০ হাজার মণ ধান ভৈরব বাজারে আমদানি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এবার সেখানে ৪-৫ হাজার মণ ধান আমদানি হচ্ছে। তবে আমদানিকৃত ধানের মধ্য অর্ধেকই পচা নষ্ট কাঁচা ভেজা।
এসব নষ্ট ধান রাইসমিল মালিক ক্রেতারা নিতে আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে। যাদের অটোরাইস মিল আছে তারাই কিছু কিছু নষ্ট ধান কিনছেন।
ব্যবসায়ীরা জানায়, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, বৃহত্তর সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলার ৩০-৩৫টি উপজেলা এলাকার ধান ট্রলার দিয়ে ভৈরব বাজারে আমদানি হতো।
প্রতিদিন শতাধিক ইঞ্জিনের নৌকা মেঘনা নদী দিয়ে কৃষক ও পাইকাররা তাদের এলাকা থেকে নিয়ে আসতো ভৈরবে। এসব ধান আড়তগুলোতে আমদানির পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হতো।
কিন্তু এবার হাওরের ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়াই কৃষকের মাথায় হাত। অপরদিকে ভৈরবের আড়তদাররাও তাদের ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার পাইকার জালাল উদ্দিন বলেন, চলতি সপ্তাহে ৫০০ মণ ভেজা ধান ভৈরবে এনে প্রতিমণে ৫০ টাকা লোকসান দিয়েছি।
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কৃষক খলিল মিয়া বলেন, ৪০ বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ২০০ মণ কাঁচা ধান ভৈরবে এনেছিলাম। কিন্তু ৩৭০ টাকা দরে বিক্রি করেও কমিশন, নৌকা ভাড়া ও লেবার খরচ বাদে ৩০০ টাকা বিক্রি করে পেলাম। এই টাকা দিয়ে মহাজন দেনাও শোধ করতে পারব না।
সুনামগঞ্জের কৃষক মধু মিয়া বলেন, আমার ৩০ বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ বছর সংসার কীভাবে চালাব ভেবে পাচ্ছি না।
ভৈরব খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেন, এবছর কৃষকের ক্ষতির সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক ধানও ভৈরব বাজারে আমদানি হয়নি। তাই এখানকার আড়তদাররা ঘরের ভাড়া, কর্মচারী বেতন পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
ভৈরব চেম্বারের সভাপতি আলহাজ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ধানের আমদানি কম হওয়াই বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এবার ধান চালের দাম তেমন কমবে না মনে হচ্ছে। গত বছর বৈশাখ মাসে শুকনা ভালো ধান ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এবার শুরুতেই ৬ টাকা দরে বিক্রি হয়। তাই চালের দাম কমবে না বরং দিন দিন বাড়তেই পারে।
আসাদুজ্জামান ফারুক/এএম/আরআইপি