রাউধা হত্যা মামলার আসামির পাসপোর্ট জব্দ
পুনঃময়নাতদন্তের জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার মালদ্বীপের মডেল রাউধা আথিফের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হবে। এ সময় সেখানে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. রক্তিম চৌধুরী।
সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফা রাউধার মরদেহ ময়নাতদন্তের আদেশ দেন রাজশাহী মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত-১।
জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. রক্তিম চৌধুরী জানান, মরদেহ তোলার সময় তাকে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সুব্রত পাল।
বুধবার দুপুরেই তিনি এ সংক্রান্ত কাগজপত্র হাতে পেয়েছেন। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে মরদেহ তোলার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মরদেহ উত্তোলনের সময় উপস্থিত থাকবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক। তবে রাউধার মরদেহ কোথায় ময়নাতদন্ত করা হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তিনি।
এদিকে, রাউধা হত্যা মামলার একমাত্র আসামি তার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদের পাসপোর্ট জব্দ করেছে সিআইডি। একই সঙ্গে তাকে কলেজ না ছাড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক বলেন, ১৫ এপ্রিল থেকে তিনি তদন্ত শুরু করেন। ওই দিনই তিনি ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সিরাত পারভীনের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই দিনই ভারতের কাশ্মিরের নাগরিক সিরাতের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।
আসমাউল হক আরও বলেন, রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে পড়তে আসা মালদ্বীপের মডেল রাউধা আথিফের মরদেহের ময়নাতদন্ত করে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
তিন সদস্যের ওই বোর্ডের প্রধান ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুনসুর রহমান।
অন্য দুই সদস্য হলেন ফরেনসিক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এমদাদুল হক এবং ওই বিভাগের বর্তমান সহযোগী অধ্যাপক এনামুল হক। এদের মধ্যে মুনসুর রহমান খণ্ডকালীন এবং এমদাদুল হক নিয়মিত রাজশাহী ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শিক্ষক।
গত ৩১ মার্চ মরদেহের ময়নাতদন্ত করে ওই মেডিকেল বোর্ড। এর পর দিনই পুলিশকে দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়, রাউধা গলায় কাপড় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন রাউধার চিকিৎসক বাবা ডা. মোহাম্মাদ আথিফ।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দায় এড়ানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক এমদাদুল হক বলেন, রাউধা আথিফ ও সিরাত পারভীন মাহমুদ দুইজনেই আমাদের শিক্ষার্থী। তারা দুইজনেই বিদেশি। এখনো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাল্টে দেয়ার আমাদের কোনো স্বার্থ নেই। আমরা যেটা পেয়েছি সেটায় প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।
গত ২৯ মার্চ বেলা ১১টার দিকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ছাত্রীনিবাসের দ্বিতীয় তলার ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধা আথিফের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
রাউধার বাড়ি মালদ্বীপের মালেতে। তার বাবা মোহাম্মদ আতিফ পেশায় একজন চিকিৎসক। ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি ওই কক্ষে ওঠেন এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রাউধা। এ নিয়ে ওই দিনই হাসপাতালের সচিব আব্দুল আজিজ রিয়াজ থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।
খবর পেয়ে ৩০ মার্চ রাজশাহী আসেন রাউধার স্বজনসহ মালদ্বীপের প্রতিনিধি দল। পরিবারের সিদ্ধান্তে ২১ মার্চ দুপুরের পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়।
রামেক হাসপাতাল ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগী প্রধান অধ্যাপক মুনসুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল ময়নাতদন্ত করেন। রাউধা আথিফ আত্মহত্যা করেছেন এই মর্মে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। পরদিন নগরীর হেঁতেমখা গোরস্থানে দাফন করা হয় মরদেহ।
রাউধার মৃত্যুর তদন্তে গত ৩ এপ্রিল মালদ্বীপের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রিয়াজ ও জ্যেষ্ঠ পরিদর্শক আলী আহমেদ রাজশাহী আসেন।
তারা রাউধার মরদেহ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক, রাজশাহী পুলিশ, রাউধার সহপাঠী, শিক্ষক এবং হোস্টেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। চারদিনের মাথায় ৭ এপ্রিল দেশে ফেরেন তারা।
এর তিনদিন পর ১০ এপ্রিল রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরদিন সেটি রেকর্ড করে শাহমখদুম থানা পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, রাউধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় ভারতের কাশ্মিরের বাসিন্দা ও রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে। এরপর ১৫ এপ্রিল থেকে সিআইডি আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে।
বিখ্যাত সাময়িকী ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ ২০১৬ সালের অক্টোবরে তাদের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা প্রকাশ করে। তাতে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মডেলদের নিয়ে।
‘বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উদযাপন’ (সেলিব্রেটিং বিউটি ইন ডাইভার্সিটি) শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছিলেন মালদ্বীপের এই মডেল।
ভোগ ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনের জন্য দেয়া সাক্ষাৎকারে রাউধা বলেছিলেন, মডেলিং আমার কাছে পেশা নয়; শখই বেশি। পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হয়ে মানুষকে সাহায্য করা আমার কাছে সব সময়ের জন্য স্বপ্ন।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/জেআইএম