বর্ষা মৌসুমে পাঠদান বন্ধ!
সুপার সাইক্লোন সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত বাগেরহাটের শরণখোলায় দশটি জরাজীর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত ক্লাস করছে দু’হাজারের অধিক কোমলমতি শিশু। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করেও কোনো ফল পাননি বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিদ্যালয়গুলোর জরাজীর্ণ ভবন ছাড়াও শ্রেণি কক্ষ, বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটসহ নানা সঙ্কটের চিত্র দেখা গেছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ওইসব বিদ্যালয়ের অনেকগুলোতেই পাঠদান করানো অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জরাজীর্ণ ভবনগুলো ভেঙে পড়ে শিক্ষক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হতাহতের আশঙ্কায় কোনো কোনো বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে ভাড়া করা ঘর, ঝুঁপড়ি ঘর বা খোলা আকাশের নিচে।
শরণখোলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৩৭ নং পশ্চিম বানিয়াখালী, ৬২ নং দক্ষিণ ধানসাগর, ৬১ নং রাজাপুর নেছারিয়া, ৩৬ নং পশ্চিম ধানসাগর, উত্তর মালিয়া রাজাপুর, ৪১ নং উত্তর কদমতলা, ৪৫ নং ছোট রাজাপুর, ৪০নং পশ্চিম খোন্তাকাটা, ৫৬ নং পূর্ব খোন্তাকাটা ও ৩৯ নং মধ্য বানিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দশটি বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনে দু`হাজারের অধিক শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে।
ওই বিদ্যালয়গুলোর নতুন ভবন ও পুননির্মাণের কথা উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করেও প্রতিকার পায়নি খোদ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
৩৭নং পশ্চিম বানিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমা, শারমিন, রবিউল, আ. রহিমসহ অনেকেই জাগো নিউজকে জানায়, তাদের বিদ্যালয়টির ভবনে বড় বড় ফাঁটল দেখা দেয়ায় বিদ্যালয়ের মধ্যে কেউ প্রবেশ করে না। বাধ্য হয়ে ঝুঁপড়ি ঘরে ক্লাস করতে হয় তাদের।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম সরোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি ২/৩ বছর পূর্বে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। এরপর থেকে পার্শ্ববর্তী ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মতিয়ার রহমানের বাড়ির একটি ঘর ভাড়া করে প্রায় এক বছর ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেয়া হয়েছে। ভাড়ার টাকা না থাকায় এখন ঝুঁপড়ি ঘরে পাঠদান করতে হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষক শিক্ষার্থীরা খাবার পানি ও টয়লেটের কাজ বিদ্যালয়ের আশপাশের বাড়িতে সারতে বাধ্য হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুশতাক আহম্মদ বিদ্যালয়গুলোর দূরাবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলোর তালিকা তৈরি করে প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হলেও বছরের পর বছর ধরে কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে সুপার সাইক্লোন সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত বাগেরহাটের এই উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। বর্ষা শুরু হলে শিশুদের জীবন বাঁচাতে এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশই বন্ধ হয়ে যাবে।
এমজেড/এমএএস/পিআর