হাওরাঞ্চলে তলিয়েছে কৃষকের শেষ স্বপ্ন
নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ীর শতকরা ৮০ ভাগ বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট গছিখাই বাঁধও ভেঙে গেছে। আর এতেই তলিয়ে গেছে কৃষকের শেষ স্বপ্ন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে বাঁধ ভেঙে খালিয়াজুড়ীর প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বোরো ফসলের মধ্যে ইতোপূর্বে শতকরা ৮০ ভাগ ফসল তলিয়ে গেছে। নতুন করে শুক্রবার রাতে জয়পুর বাঁধ ভেঙে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩১০০ হেক্টর জমির সবটুকুই তলিয়ে গেছে।
শনিবার বিকেলে গছিখাই নামার বাঁধ ভেঙে নগর ইউনিয়নে জেগে থাকা অবশিষ্ট ফসলও তলিয়ে গেছে। হাওরাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ, কাঠ, টিন ও মাটির বস্তা দিয়ে বাঁধ দুটি রক্ষার চেষ্টা করেও পরাজিত হয়েছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখন ডুবে যাওয়া কাঁচা ধান কেটে গবাদিপশুর খাদ্য সংগ্রহের শেষ চেষ্টা করছে। এলাকার একমাত্র বোরো ফসল ডুবে যাওয়ায় কৃষক পরিবারগুলোতে কান্নার রোল পড়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৩২ মেট্রিক টন জিআর চাল বিতরণ করা হয়েছে।
ক`দিনের ঢলের পানিতে বিভিন্ন বাঁধ ভেঙে শস্য ভাণ্ডার খালিয়াজুড়ীর শতকরা ৭০ ভাগ বোরো ফসল ডুবে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাঁধ মেরামতের মাধ্যমে অবশিষ্ট জমি রক্ষায় এখন চলছে আপ্রাণ চেষ্টা।
বেঁচে থাকা অবশিষ্ট জমি রক্ষার জন্য হাজার হাজার কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রাতদিন খেটে গছিখাই নামার বাঁধ, গোরস্থানের বাঁধ, বেরীখালীর বাঁধ, পাইয়ার বাঁধ, ছায়ার বাঁধসহ ৮-১০টি বাঁধ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জব্বার জাগো নিউজকে জানান, খালিয়াজুড়ীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ সঠিক সময়ের মধ্যে ঠিকভাবে হলে এত বেশি ফসলের ক্ষতি হতো না। পাউবো বরাদ্দের চারভাগের একভাগ কাজও করেনি পিআইসি কমিটির লোকজন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম জাগো নিউজকে জানান, বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের কারণেই হাওরের শতভাগ ফসল নষ্ট হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার দাবি জানান তিনি।
তবে নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু তাহের জাগো নিউজের কাছে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এখানকার কাজে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ পাউবো কোনো দোষই করেনি।
এদিকে গবাদি পশুসহ হাওরাঞ্চলের মানুষের খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গোখাদ্যের অভাবে অর্ধেক মূল্যে কৃষকরা গবাদি পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন। পাঁচহাটসহ কয়েকটি বাজারে ৪০ টাকা কেজির চাল কিনতে হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে। আটায় প্রতি বস্তায় বেড়েছে ৩ থেকে ৪শ টাকা।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিলাশ চন্দ্র পাল জাগো নিউজকে জানান, এ পর্যন্ত হাওরাঞ্চলের ৩৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে আরো অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
পাউবোর মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর কবীর শনিবার বিকেলে হাওরাঞ্চল পরিদর্শন করে জাগো নিউজকে জানান, হাওর রক্ষা প্রকল্পে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া হাইজদা ২৯ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধের অংশের জন্য একনেকে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
হাওর উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মজিবুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, হাওরাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের সামনে বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে। এছাড়া বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১৫৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। ১৮ হাজার ৯৩৮টি পরিবারকে ১৫ কেজি করে চাল ও ২২০০ পরিবারকে নগদ পাঁচশ করে টাকা জরুরি ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা করা হচ্ছে।
কামাল হোসাইন/এফএ/এমএস