উদ্ধার হয়নি আতিয়া মহলে থাকা দুটি মরদেহ
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ র্যাব-৯-এর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ও ডগ স্কোয়ার্ড দলের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ডগ নিয়ে অভিযান চালানোর আড়াই ঘণ্টায়ও ভবনের ভেতরে পড়ে থাকা মরদেহ দুইটি উদ্ধার করা সম্ভব যায়নি।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বিকেলে সাড়ে ৩টায় জানান, দুপুর ১টার দিকে র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ও ডগ স্কোয়ার্ড দলের সদস্যরা অভিযান চালাচ্ছেন। তারা ভবনটিতে কোনো বিস্ফোরক নেই বলে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করার পর পুলিশের ক্রাইম সিনের সদস্যরা মরদেহ উদ্ধার ও আলামত সংগ্রহ করবেন।
এর আগে সকাল ৮টার দিকে ‘আতিয়া মহল’ এলাকায় র্যাব সদস্যরা উপস্থিত হয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা তারা ঘটনাস্থল এবং এর আশপাশ এলাকা পর্যবেক্ষণ করার পর অভিযান শুরু করেন। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য পুরোদমে অভিযান শুরু করতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
‘আতিয়া মহলে’ সেনাবাহিনীর প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন পরিচালিত জঙ্গিবিরোধী অভিযান ‘টোয়াইলাইট’ গত ২৭ মার্চ ৪ জঙ্গি নিহত হয়েছে জানিয়ে অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবনের ভেতরে দুইটি মরদেহ পড়ে আছে। মরদেহসহ আতিয়া মহলের দায়িত্ব পুলিশকে বুজিয়ে দেয়া হয়েছে।
অভিযানকালে উদ্ধার করা দুই মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে গত ৩১ মার্চ নগরীর হজরত মানিক পীর (রহ.) কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।
দীর্ঘ পাঁচদিন ধরে ভবনের ভেতরে পড়ে থাকা দুই মরদেহ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে এই এলাকার লোকজন দুর্গন্ধের জন্য চরম বিপাকে পড়েছেন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলের নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে-এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও মহানগর পুলিশের একটি দল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাত আড়াইটার দিকে জঙ্গিদের ফ্ল্যাটের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়ে পুরো ভবনটি ঘিরে রাখে।
এরপর শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে ওই বাড়ির ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। পরে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২৪ মার্চ সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দল। পরদিন ২৫ মার্চ তারা ওই ভবনের ২৯টি পরিবারের ৭৮জন বাসিন্দাদের জঙ্গিদের জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেন তারা।
২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অভিযান নিয়ে সেনবাহিনীর প্রেস ব্রিফিং শেষ হওয়া মাত্র আতিয়া মহলের ২০০ গজ দূরে দুই দফা বোমার বিস্ফোরণে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাতজন নিহত হন। আহত হন আরও ৪৬ জন।
অভিযানের চতুর্থ দিন গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী জানায়, অভিযানে চার জঙ্গির নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে আছে তিন পুরুষ ও এক নারী। ভবনের ভেতরে আর কোনো জীবিত জঙ্গি নেই। এছাড়া অভিযান সফলভাবে শেষ হওয়ার পর ভবনে থাকা দুইটি মরদেহ ও আতিয়া মহলের দায়িত্ব পুলিশকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
ছামির মাহমুদ/এআরএ/এমএস