মাদক ঠেকাতে ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের জিহাদ ঘোষণা
ঠাকুরগাঁও জেলাকে মাদকমুক্ত ও যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে বাঁচাতে জিহাদ ঘোষণা করেছে পুলিশ প্রশাসন। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৩৮ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ।
গত এক মাস যাবৎ পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদের নেতৃত্বে জেলায় প্রতিদিন বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ধরা হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের।
পুলিশ সুপারের মাদক বিরোধী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। অভিযান অব্যাহত থাকলে পুলিশের এই মহতি কাজে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন ঠাকুরগাঁওবাসী।
পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে ‘মাদক জোন’ বলে পরিচিত এলাকাগুলো এখন প্রায় মাদকশূন্য। আর এ কারণে জেলার মাদক ব্যবসায়ীরা এখন আতঙ্কে।
পুলিশের তথ্য মতে, ২৮ মার্চ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ের ৬টি থানায় মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত ১২৭টি মামলা দায়ের এবং ১৩৮ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১৬ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের ভারতীয় ফেনসিডিল, ভারতীয় মদ, ইয়াবা ট্যাবলেট, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
এরমধ্যে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় মাদকদ্রব্যের ৩৭টি মামলা, ডিবি পুলিশের মাধ্যমে ১০টি মামলা, রুহিয়া থানায় ৬টি মামলা, বালিয়াডাঙ্গী থানায় ১৭টি মামলা, পীরগঞ্জ থানায় ২৮টি মামলা, রাণীশংকৈল থানায় ১৬টি মামলা এবং হরিপুর থানায় ১৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের তালিকা অনুযায়ী জেলায় প্রায় সাড়ে ৫শ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। পুলিশ এসব মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
শহরের সিরাজ উদ্দীন বলেন, এক সময় জেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল এতে আমরা সন্তানদের নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এমনকি রাতে ভালো করে ঘুমাতেও পারতাম না।
শাহাপাড়া মহল্লার মিজানুর রহমান বলেন, আগে যেখানে সেখানে দিনদুপুরে মাদক ব্যবসায়ীদের মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে দেখা যেতো। এতে যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। বর্তমানে পুলিশের তৎপরতায় জেলায় মাদক ব্যবসা অনেকাংশে কমে গেছে।
জেলাকে মাদকমুক্ত রাখতে হলে আদালতের আইনজীবীদের সতর্ক হতে হবে উল্লেখ করে ঠাকুরগাঁওয়ে সমাজসেবক ও ভাষা সৈনিক আকবর হোসেন মন্তব্য করে বলেন, অনেক সময় দেখা যায় পুলিশ মাদকসহ আসামি আটক করার পর সিনিয়র আইনজীবীর মাধ্যমে মাদক বিক্রেতারা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। আইনজীবীরা এ ব্যপারে সতর্ক হলে এমনটা আর ঘটবে না।
এ ব্যাপারে সদর থানা পুলিশের ওসি মশিউর রহমান বলেন, জেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে পুলিশ নাওয়া খাওয়া ভুলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে এবং মাদক ব্যসায়ীদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ বলেন, মাদক ব্যবসা বন্ধে পুলিশ সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীরা যে দলেরই হোক না কেন, ছাড় দেয়া হবে না। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিহাদ ঘোষণা করেছি। আমরা যেভাবে কাজ করছি এতে খুব শিগগিরই ঠাকুরগাঁও জেলা মাদকমুক্ত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
রবিউল এহসান রিপন/এমএএস/পিআর