সিটি নির্বাচন : নিরাপত্তার চাদরে কুমিল্লা নগরী
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচনী এলাকায় প্রচুর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নগরীর ছোটরা এলাকায় অবস্থিত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার সদস্য মাঠে থাকবে। নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৪৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলার তদারকি করবেন।
এ নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিতে পুলিশের দুই হাজার ৪৫৬ জন সদস্য, র্যাবের ৩৩৮ জন, বিজিবির ২৭ প্লাটুনে ৬০০ জন এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সঙ্গে প্রশিক্ষিত ব্যাটালিয়ন আনসারের ৫৩০ জন ও আনসারের ১৪৪২ জনসহ ১৯৭২ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২৪ জন করে সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কুসিক নির্বাচনে ১০৩টি ভোটকেন্দ্রের সবগুলোকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কোতয়ালী মডেল থানা এলাকায় ৭২টি ভোটকেন্দ্র এবং সদর দক্ষিণ মডেল থানা এলাকায় ৩১টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নিত করে প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং র্যাবের ৮ সদস্যের একটি দল দায়িত্ব পালন করবে।
এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ ২টি করে কেন্দ্রে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও প্রশিক্ষিত ব্যাটালিয়ন আনসার ফোর্সের সদস্যদের পৃথক মোবাইল টিম নিয়োজিত থাকবে। ভোটকেন্দ্রে আসার পথে কোনো ভোটার যেন বাধাগ্রস্ত না হয় তার জন্য র্যাব ও পুলিশের মোবাইল টিম ওয়ার্ডগুলোতে টহলে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নির্বাচনী ২৭টি ওয়ার্ডে পুলিশের ২৪ ঘণ্টায় ২৭টি টহল দল কাজ করছে। একটি টিমে ৬ জন করে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। বুধবার দুপুর থেকে নগরীর বিভিন্নস্থানে র্যাবের ডগ স্কোয়াড ও বোম ডিসপোজাল ইউনিটি বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছে।
কুমিল্লা র্যাব-১১-এর অধিনায়ক মেজর মোস্তফা কায়জার বলেন, নির্বাচনে বিজিবি, পুলিশ ও আনসারের সঙ্গে র্যাবের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। তারা মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ভোটের দিনও তল্লাশি চলবে। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানান, প্রশ্নবিদ্ধ নয়, কুমিল্লায় হবে মডেল নির্বাচন। শঙ্কা দূর করে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে কুসিক এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, এলাকায় র্যাব-পুলিশের টহল ও গাড়িতে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ নির্বাচনে ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এরমধ্যে ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত সদস্যদের দিক-নির্দেশনা প্রদান করবেন। এছাড়াও আরও ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একইভাবে তদারকির দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে বুধবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর পুলিশ লাইনে জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন, দুপুরে নগরীর টাউন হলে র্যাব অধিনায়ক মেজর মোস্তফা কায়জার এবং বিকেলে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আনসার-ভিডিপির উপ-মহাপরিচালক (অপারেশন) দীলিপ কে বিশ্বাস নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে পৃথক প্রেসব্রিফিং করেন।
এর আগে ওই তিনটি সংস্থার সংশ্লিষ্ট বাহিনীর নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সদস্যদের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এসময় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার-ভিডিপির পদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেন, যেকোনো ধরনের অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। এ নির্বাচনকে ফেয়ার করতে পুলিশ শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রাখবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১টি করে মোবাইল পার্টি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। এছাড়া র্যাব-বিজিবি-আনসারের আলাদা স্ট্রাইকিং পার্টি থাকবে।
এএসএস/এমএম/বিএ