ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আতিয়া মহলে নিহত নারীই কি সেই মর্জিনা?

প্রকাশিত: ০৯:১১ পিএম, ২৭ মার্চ ২০১৭

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দিনগত রাত থেকে পুলিশ জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’ ঘিরে রাখার পর থেকেই আলোচিত হচ্ছিল মর্জিনা নামটি। এই বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে মর্জিনা বেগম নামের এক নারী জঙ্গি এবং তার স্বামী কাওসার আলীসহ আরও কয়েকজন জঙ্গি রয়েছেন এমন গোয়েন্দা তথ্যেই পুলিশ পাঁচতলা ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে। মর্জিনা বেগম এবং কাওসার আলী দু’জন স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তিনমাস আগে এই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন।

এদিকে, আতিয়া মহলের নিচতলা থেকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দলের উদ্ধার করা দুটি মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। উদ্ধার করা দুটো মরদেহের মধ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষ।

শুক্রবার দিনভর পুলিশ হ্যান্ডমাইকে পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় ফ্ল্যাটের ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। এ সময় জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন ও এসআই শাহ আলমকে মর্জিনার নাম ধরে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাতে শোনা যায়।

তারা দুজনই হ্যান্ডমাইকে বলেন, ‘মর্জিনা জানালা খুলে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন, আপনাদের দাবি-দাওয়া কী আমাদের বলেন, এখানে মিডিয়ার লোকজনও আছে। আপনারা বেরিয়ে এসে আত্মসর্মপণ করুন। আপনাদের কিছুই করা হবে না। কথা বলুন, মর্জিনা কথা বললে ভালো লাগে...।’

শুক্রবার দুপুরের দিকে পুলিশের ওই আহ্বানের সময় ফ্ল্যাটের একটি জানালার ফাঁক দিয়ে একজন নারী প্রত্যুত্তরে কথা বলেন বলে জানান এসআই শাহ আলম। ওই সময় মর্জিনা নামের ওই নারী পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন- তোমরা শয়তানের পথে আছো আর আমরা আল্লাহর পথে আছি। মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী। তাড়াতাড়ি সোয়াটকে পাঠা সময় কম। ওরা এলে কথা হবে।

সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে প্রেস ব্রিফিংকালে সামরিক গোয়েন্দা পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানান, আতিয়া মহলে চারজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারী ও তিনজন পুরুষ। তারমধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারীর মরদেহ ভবন থেকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভবনটিতে এখন আর কোনো জঙ্গি জীবিত নেই। তবে প্রচুর বিস্ফোরক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় এগুলো উদ্ধার করে ধ্বংস করার অভিযান অব্যাহত থাকবে।

নিহতদের পরিচয় জানা গেছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিচয় এখনও জানা যায়নি। পুলিশ ও র‌্যাব পরে তদন্ত করে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করবে।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রের দেয়া তথ্যমতে আমরা ধারণা করছি উদ্ধার হওয়া মরদেহ দুটি জঙ্গি কাওসার ও মর্জিনার হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে জানা যেতে পারে।

উদ্ধারকৃত দুটি মরদেহই ওসমানী হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই দুটি মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপপরিচালক ডা. দেবপদ রায় দেবু বলেছেন, আমরা মরদেহগুলো সন্ধ্যার পরে পেয়েছি। এখনও সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়নি। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর মঙ্গলবার তাদের ময়নাতদন্ত করা হবে।

ওসমানী হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকারী একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসপাতালে আনা নিহত দুজন মর্জিনা ও কাওসার বলে মনে হচ্ছে। তবে মরদেহ দুটি গুলি ও বিস্ফোরণে ঝাঁজরা হয়ে গেছে। দেখে পুরোপুরি চেনার উপায় নেই।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার এই বাড়িটি গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে ঘিরে রাখা হয়েছে। শুক্রবার ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট সিলেটে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থল ঘেরাও করে।

এরপর শনিবার (২৪ মার্চ) সকাল থেকে সেনাবাহিনীর সিলেট জালালাবাদ সেনানিবাসের প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের লে. কর্নেল ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরু করা হয়। তবে পুরো অভিযান সমন্বয় এবং নেতৃত্ব দেন সিলেট সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমিন।

এ অভিযানের মধ্যেই শনিবার সন্ধ্যায় আতিয়া মহল থেকে ২০০ গজ দূরে দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ পরিদর্শকসহ ছয়জন নিহত এবং আরও ৪৬ জন আহত হন। দেশের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী জঙ্গিবিরোধী সেনা অভিযান এটি। এর আগে রোববার দুজন পুরুষ জঙ্গি নিহত হন।

সেনাবাহিনীর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ওই ভবনের নিচতলায় নিহত দুজনের কোমরে সুইসাইডাল ভেস্ট বেল্ট বাধা রয়েছে। এ কারণে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা যাচ্ছে না।

বিএ

আরও পড়ুন