ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

৮৫ হাজার টাকার উপর নির্ভর করছে রমজানের ভাগ্য

জেলা প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ০৩:০৯ পিএম, ২৪ মার্চ ২০১৭

মেরিন ফিশারিজ একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে ‘নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছেনা শেরপুরের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী মো. রমজান আলী।

তিন বছরের স্নাতক কোর্সে ভর্তির জন্য ৬ কিস্তিতে প্রয়োজন ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। প্রথম কিস্তিতেই ভর্তির জন্য প্রয়োজন ৮৬ হাজার টাকা। রাস্তার পাশের তরিতরকারি বিক্রেতা বাবা ও গার্মেন্টসকর্মী মায়ের পক্ষে সেই টাকা যোগাড় করা অসাধ্য।

ছেলের ভালো কলেজে ভালো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়াও তাদের দারুণ ভাবিয়ে তুলেছে। সব মিলে তারা ২০ হাজার টাকা যোগাড় করেছেন। এলাকার এক দানশীল ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছেন। তাদের কোনো সহায়-সম্বলও নেই যে বিক্রি করে ছেলের ভর্তির ব্যবস্থা করবেন।

এদিকে, ভর্তির সময়ও ঘনিয়ে  আসছে। আগামী ২৭ মার্চ ভর্তির তারিখ। যে কারণে হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন বাবা-মা। তারা তার ছেলের মেরিন ফিশারিজ একাডেমীতে পড়ালেখার জন্য সমাজের হৃদয়বান বিত্তশালীদের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

সাহায্যের আশায় মেধাবী রমজান আলীও বিভিন্ন জনের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। এমন অবস্থায় রমজানের সাদাকালো জীবনের রঙ্গিন স্বপ্ন ফিকে হওয়ার পথে। এবার ভর্তি না হতে পাড়লে হয়তো তাকে তার বাবা-মা’র পথেই হাটতে হবে। হয়তো গার্মেন্টসে মজুরি কিংবা ফুটপাতে দোকান পাততে হবে। কিন্তু রমজান এবং তার বাবা-মার ইচ্ছা, সে মেরিন একাডেমীতে লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হোক, সমাজ এবং দেশের সম্পদে পরিণত হোক।

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কুরুয়া নিমতলী গ্রামের দরিদ্র রফিকুল ইসলামের ছেলে মেধাবী শিক্ষার্থী রমজান আলী। মেধাবী হলেও ২০১২ সালে ৮ম শ্রেণিতে সমাপনি পরীক্ষা দিয়ে কেবলমাত্র পেটের তাগিদে পাড়ি জমায় গাজীপুরে। সেখানে সে একটি বোতাম কারখানায় কাজ নেয়। বাবা রফিকুল ইসলাম গাজীপুরে ইটাহাটা রাস্তার মাথায় ফুটপাতের ওপর সবজির দোকান করেন। মা এবং তার ছোট বোন ৭ম শ্রেণিতে পাঠ চুকিয়ে সেখানে দিগন্ত সোয়েটার নামে একটি গার্মেন্টস এ শ্রমিকের কাজ নেয়। আরেক ছোট বোন মায়ের সঙ্গেই থাকেন।

রমজানের দাদা বাড়ি শেরপুর পৌরসভার তাতালপুর গ্রামে হলেও সেখানে কোনো ভিটেমাটি না থাকায় ছোটবেলা থেকেই শ্রীবরদী উপজেলার কুরুয়া গ্রমে নানা বাড়ির আশ্রয়ে ছিলেন।

এদিকে মেধাবী রমজানের পড়াশোনা ছেড়ে গার্মেন্টসে কাজের খবর পেয়ে স্থানীয় খোরশেদ নামে এক শিক্ষার্থীর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন সেনাসদস্য শাহীন মিয়া। পরে তাকে পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনা হয় এবং তার সহায়তায় রমজানকে স্থানীয় ভটপুর এইচপি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়।

কুরুয়া বাজারে এক দর্জির দোকানে কাজ করার পাশপাশি চলতে থাকে রমজানের লেখাপড়া। ২০১৪ সালে ভটপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে  থেকে রজমান এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায়। কিন্তু অর্থের অভাবে আবারও রমজান গাজিপুরে তার বাবার কাছে ফিরে যায়। এবারও শাহিন মিয়ার সহায়তায় আবারও তাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে ময়মনসিংহ শহরের ‘এডভান্স রেসিডিয়ানসিয়াল মডেল কলেজে’ ভর্তি করা হয়।

সেখানে তাকে বিনাখরচে লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ার করার সুযোগ করে দেয়া হয়। সেই কলেজ থেকে সে ২০১৬ সলে এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর চলে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ও মেডিকেল কলেজসহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রতিযোগিতা।

মেডিকেলে এবং পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষমান তালিকায় থাকলেও পরে আর ভর্তির সুযোগ হয়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজ একাডেমীতে ভর্তির সুযোগ হয়। লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা (সাঁতার পরীক্ষা ও চোখের পরীক্ষা) শেষে ‘নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগে মেধাতালিকায় রমজান ৫ম স্থান লাভ করে।

আগামী ২৭ মার্চ সেখানে ভর্তির শেষ তারিখ। কিন্তু সেখানে ভর্তির জন্যই প্রয়োজন ৮৬ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে তার পক্ষে বা তার পরিবারের পক্ষে সেখানে ভর্তি হওয়ার মতো অর্থ জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই রমজান সহৃদয়বান ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়াচ্ছে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে।

রমজান জানায়, তার খুব ইচ্ছে পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করে সংসারের অভাব দূর করবে এবং তার মতো অভাবী শিক্ষর্থীদের জন্য কাজ করবে। কিন্ত বারবার শুধু কেবলমাত্র অর্থাভাবেই পড়াশোনায় ছেড়ে দিয়ে পেটের তাগিদে শ্রমের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে। এবার তার স্বপ্নের চূড়ান্ত পর্বে এসে আবারও আটকে যেতে হচ্ছে।

সে জানায়, আমাকে যদি কোনো বিত্তবান ব্যক্তি মেরিন একাডেমীতে ভর্তির সুযোগ করে দিতেন তাহলে হয়তো আমার সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারতাম।

রমজানের বাবা রফিকুল ইসলাম বলন, ছেলেটা বরাবর ভালো ছাত্র। কিন্তু তাকে আমি ঠিকমতো পড়ালেখা করাতে পারি নাই। কিন্তু তারপরও সে ভালো ফলাফল করেছে। এবার সে ভালো একটি জায়গায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সেখানে পড়ালেখা করতে পারলে সে হয়তো ভবিষ্যতে দেশের সম্পদ হবে। কিন্তু আমাদেরতো সামর্থ নাই। আমি আমার ছেলেকে মেরিন একাডেমীতে পড়ালেখার জন্য সকলের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানাই।

সেনাসদস্য শাহীন মিয়া বলেন, মেরিন একাডেমিতে সবাই ভর্তির সুযোগ পায়না। আর সেখানে মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগ পেয়েও দরিদ্র-মেধাবী রমজান অর্থের অভাবে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় আছে। ছেলেটি লেখাপড়ার সুযোগ পেলে সেখানে ভালো ফলাফল করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি। আমি তার স্বপ্ন পুরণে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

আগ্রহীরা সহায়তার জন্য সেনাসদস্য শাহীন মিয়া-০১৭২৮-০৯৭৯৬৭ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

হাকিম বাবুল/এমএএস/পিআর