প্রচারণায় এগিয়ে সীমা কৌশলে সাক্কু
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে নিজ দলের মেয়র প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে টেনশনে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ঢাকা থেকে উভয় দলের শীর্ষ নেতারা সার্বক্ষণিক নির্বাচনের বিষয়টি মনিটরিং করছেন।
বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুসিকের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনেও সাক্কু ধানের শীষের প্রার্থী।
এদিকে, বিএনপির সাক্কুও প্রথম নির্বাচনের ন্যায় ভোটের মাঠে বাজিমাত সৃষ্টি করতে কৌশলী ভূমিকায় রয়েছেন। তবে ক্ষমতাসীনদের তুলনায় শোডাউন ও প্রচার-প্রচারণায় এখনো পিছিয়ে সাক্কু।
অন্যদিকে, কুসিকের প্রথম নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে সাক্কুর সঙ্গে বিজয়ী হতে না পারা কুমিল্লার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী। দলীয় সরকার ক্ষমতায়। তাই নৌকার বিজয়কে সরকার দলীয়রা নিজেদের মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছেন। তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি, শোডাউন ও কর্ম পরিকল্পনাও তাই প্রমাণ করে।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা ২৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার মধ্যদিয়ে তার পরিকল্পনার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিগত ৫ বছরের কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক সমালোচনা করতেও পিছিয়ে ছিলেন না। অপরদিকে সীমার নির্বাচনী ইশতেহারের সমালোচনায়ও মুখর ছিলেন সাক্কু।
ইতিমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী শুক্রবারের মধ্যেই সাক্কু তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। আর ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু করা হয়েছে।
এদিকে, আইনগত জটিলতার কারণে ভোটের মাঠে আসতে না পারলেও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং রেলমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিব সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। নৌকাকে বিজয়ী করতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ২৭টি ওয়ার্ডে পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কুসিক নির্বাচনে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম কুমিল্লায় অবস্থান করে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে গঠিত কমিটির কার্যক্রম সমন্বয় করছেন।
অপরদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে বিএনপির এক প্রতিনিধি দল সাক্কুর পক্ষে মাঠে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কৌশলগত কারণ এবং জোটের সঙ্গে মতবিরোধের জন্য সাক্কুর পাশে নেই জামায়াত।
এছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুসিকের সদর দক্ষিণ উপজেলার বাসিন্দা আলহাজ্ব মনিরুল হক চৌধুরী এখনো সাক্কুর জন্য প্রচারণায় না নামায় ভোটের মাঠে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
দুই মেয়র প্রার্থী পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা বুধবার দিনভর নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা নগরীর কচুয়া, রাজাপাড়া, ঢুলিপাড়া, চৌয়ারা, এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এসময় তিনি বেশ কিছু উঠান বৈঠকসহ পথসভায় বক্তব্য রাখেন এবং নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী কুমিল্লা নগরী গড়ে তোলার জন্য ভোটারদের কাছে ভোট চান।
সীমার পক্ষে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাড. মোল্লা আবু কাউছার, নগরীর বাদুরতলা, ঝাউতলা ও ধর্মপুর এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মতিউর রহমান মতি, তানভীর শাকিল জয়, কাজী শহিদুল্লাহ লিটন, আব্দুল আলীম, শেখ সোহেল রানা টিপু, সালেহ মোহাম্মদ টুটুল, হুমায়ুন কবির, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম আবুল।
মনিরুল হক সাক্কু পক্ষে নগরীর টমছম ব্রিজ, আশ্রাফপুর, ইপিজেড গেট, শাকতলা, উনাইসার এলাকায় গণসংযোগ করেন কুসিক নির্বাচনে ২০ দলের সমন্বয়ক ও এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গনি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা।
সাক্কু প্রচারণা চালান কাশারীপট্রি, চকবাজার, থিরাপুকুরপাড়, বজ্রপুর এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রমুখ।
কামাল উদ্দিন/এআরএ/এমএস