দিবস-টিবস বুঝি না, পেটের জন্য এই সংগ্রাম
শারীরিক প্রতিবন্ধী সংগ্রামী নারী বেগম বিবি (৪৫)। বেঁচে থাকার তাগিদে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জীবন-জীবিকার জন্য বেছে নিয়েছেন সেলাই মেশিনের কাজ। নওগাঁ শহরের সাহেব পাড়া ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি।
জন্মগতভাবে বাম পা ছোট। ফলে ডান পায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন না বেগম। বিয়ে হয়েছে ১৩ বছর বয়সে। পড়াশুনা করা তেমন হয়ে উঠেনি।
বাবার বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামে। দীর্ঘ ২২ বছরের সংসার। সংসার জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের বিয়েও হয়েছে। স্বামী কোন কাজকর্ম করেন না।
নিজেই পরিশ্রম করে সংসার চালাতেন। ক্ষোভের বসে দীর্ঘ সংসার জীবন থেকে অবশেষে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন প্রায় ১০ বছর আগে। স্বামীও অনত্র বিয়ে করেছেন। এরপর থেকে থাকেন নওগাঁ শহরে ভাড়া বাসায়।
ছোট কাপড় থেকে ব্যাগ তৈরি করে বেগম নিজেই জিবীকা নির্বাহ করছেন। জেলার রাণীনগর উপজেলার ইলশাবাড়ী থেকে ছাট কাপড় কিনে এনে ব্যাগ তৈরি করেন। প্রতি কেজি ছাট কাপড়ের দাম ৩০ টাকা।
১ কেজি ছাট কাপড় থেকে ছোট আকারে ব্যাগ ৪ ডজন এবং বড় আকারে ব্যাগ ৩ ডজন হয়। পাইকারি বিক্রি হয় ছোট ব্যাগ ২০ টাকা ডজন এবং বড় ব্যাগ ২৮ টাকা ডজন। অনেক সময় পাইকাররা নিজে এসে নিয়ে যান। আবার বেগম নিজে গিয়ে দোকানে দোকানে দিয়ে আসেন।
এসব বিষয়ে বেগমের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। বুধবার (০৮ মার্চ) বিশ্ব নারী দিবস নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিবস-টিবস বুঝি না। জীবনের তাগিদে ছুটে চলছি। এই সংগ্রাম জীবিকা নির্বাহের। ওসব দিবস-টিবসের খোঁজ রেখে লাভ কী।
এই প্রতিবেদককে বেগম বলেন, শহরে আসার পর চোখে সরষে ফুল দেখার মতো অবস্থা। বুদ্ধি করে সেলাই মেশিনের প্রশিক্ষণ নিই। সে সময় প্রশিক্ষণে ১ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।
এরপর ২ হাজার টাকায় কানের দুল বিক্রি করে এর সঙ্গে আরও কিছু টাকা যোগ করে পুরাতন একটা সেলাই মেশিন কিনি। এরপর থেকে ব্যাগ তৈরি শুরু। পাশাপাশি জামা কাপড়ও সেলাই করা হয়। জীবনে টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে চলছি।
বেগম আরও বলেন, দীর্ঘ সময় মেশিন চালানো হলে পা ব্যাথা করে। এলার্জি একটু সমস্যা আছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও সংগ্রাম করছি। সমাজ সেবা অধিদফতর থেকে ১ বছর আগে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেশী ইফতিয়ার পারভিন বলেন, স্বামী সংসার সবকিছু ছেড়ে দিয়ে একাই এখানে বসবাস করে। খুবই পরিশ্রমী বেগম। অনেক সময় গভীর রাত পর্যন্ত সেলাই মেশিনের কাজ করেন।
আব্বাস আলী/এএম/পিআর