১০ হাজার টাকা ধার নিয়ে আজ তিনি ‘মডেল’
মাগুরায় নকশিকাঁথা ও চাদর তৈরি করে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন সদর উপজেলার খাল কূল পাড়ার নাছিমা ফারজানা। তার নেতৃত্বে এলাকার প্রায় দেড়শ’ অসহায় দুস্থ নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।
একই সঙ্গে তার তৈরি নকশিকাঁথা ও চাদরের গুণগতমান খুব ভালো হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে তার তৈরি নকশিকাঁথা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলা নড়াইল, যশোর, ঝিনাইদহসহ রাজধানী ঢাকার নামি দামি শপিং মলে বিক্রি হচ্ছে।
ইতোমধ্যে তিনি মাগুরা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নিজ বাড়িতে তৈরি করেছেন ‘সোনার তরী মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা’ নামের একটি উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান।
এসব বিষয়ে কথা হয় নাছিমা ফারজানার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ২০১২ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে অর্থনীতিতে স্নাতক- স্নাতকোত্তর শেষ করেন।
ওই সালে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে পোশাকের কারচুপির সংবাদ দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে মায়ের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নিয়ে বাড়ির আশপাশের কয়েকজন অসহায় নারীদের নিয়ে ছোট পরিসরে কাজটি শুরু করেন। প্রথম বছরেই তিনি খরচ বাদ দিয়ে ২ হাজার টাকা লাভ পান। পরবর্তীতে তিনি ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধি করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। বর্তমানে জেলাজুড়ে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই তাকে মডেল মানে।
উপকারভোগী মায়া রায় জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে তার নেতৃত্বে গ্রামের প্রায় দেড়শ’ জন নারী-পুরুষ কাজ করছেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় আরও ৫০ জন অসহায় নারী কাজ করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। এ কাজ করে দিন দিন আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন তারা।
নকশিকাঁথার কারিগর ঝর্ণা রায় জানান, এখানকার বিভিন্ন প্রকারের নকশিকাঁথা, চাদর, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, ব্যাগ, ওয়ালসেট, টেবিল ক্লথ, কুশন-কভার, বেডশিট ইত্যাদির মান খুব ভালো হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা ভিড় জমান নাছিমার বাড়িতে। বাজারে তার তৈরি এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
এ বিষয়ে জাগো নিউজকে প্রভাষক নাঈমা ফারহানা বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি গঠনে হস্ত শিল্পের অবদান অপরিসীম। তবে বাজার ব্যবস্থার উন্নতি ও পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করণের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে পুরস্কৃত করা গেলে এসব উদ্যোক্তরা দেশ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা জহুরা জাগো নিউজকে জানান, নাছিমা ফারজানা মাগুরার মডেল ও একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে তার ১৫০ সদস্যের একটি মহিলা সমিতি রয়েছে।
এছাড়া তার উৎপাদিত নকশিকাঁথা ও চাদরের মান খুব ভালো ও দাম কম হওয়ায় বাজার চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। তবে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে তিনি আরও এগিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান তিনি।
মো. আরাফাত হোসেন/এএম/এমএস