হার না মানা ফাতেমা
ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্ত এলাকার আত্মপ্রত্যয়ী ফাতেমা পাপোস তৈরির কারখানা গড়ে তুলে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অন্যদেরও আয়ের পথ দেখিয়েছেন সংগ্রামী এই নারী। সহজ শর্তে ঋণ আর বিপণন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে এ কারখানার চাকায় পাল্টে যাবে গ্রামীণ অর্থনীতির দৃশ্য।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারে মেয়ে ফাতেমা বেগম। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা ফাতেমার বিয়ে হয়েছিল কিশোরী বয়সে। রাণীশংকৈল উপজেলার কাদিহাট গ্রামে বাবুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ের দুই বছরের মাথায় কোল জুড়ে আসে নতুন মুখ। স্বামীর ঘরেও নেমে আসে অভাব।
অভাবের তাড়নায় স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে স্বামী চোরাই পথে পাড়ি দেয় ভারতে। তখন ফাতেমার চোখে মুখে অন্ধকারের ছাপ। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ফাতেমা চলে যায় ঢাকায়। সেখানে পাপোস তৈরির কাজ শিখে স্বামীর বাড়ি ফিরে আসে।
২০০৪ সালে চারটি তাঁত বসিয়ে শুরু করেন পাপোস তৈরির কাজ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কয়েক বছরের মাথায় নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে অন্য নারীদেরও বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন।
ফাতেমার কারখানায় কাজ করেন সুলতানা বেগম। তিনি বলেল, আগে আমার সংসারে অনেক অভাব ছিল। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারতাম না। কিন্তু ফাতেমার এখানে কাজ করার পর থেকে সংসারের অভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাচ্ছি এখন।
এখানে কাজ করা নবম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল বলে, নিজের পড়ালেখার খরচ এখন নিজেই চালাই। আবার পাশাপাশি বাবা-মাকে আর্থিক সহযোগিতাও করি । আমি অনেক খুশি। কারণ এখন সংসারের জন্য আমিও কিছু করতে পারছি।
খাদিজা বেগম নামে এক নারী বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পরে সন্তানদের নিয়ে জীবন চলা অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। মাঠে কাজ করে সন্তানদের দেখাশুনা করতে পারতাম না। কিন্তু ফাতেমা আপার কারখানায় কাজ হওয়ার পর থেকে সন্তানদের দেখাশুনাও করতে পারতেছি। এখন সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি আমি।
ফাতেমার এ উদ্যোগ দেখে এলাকার অনেকেই গড়ে তুলেছেন এই শিল্প। এখানে উৎপাদিত হচ্ছে উন্নতমানের পাপোস, ওয়ালম্যাট, কার্পেট, জায়নামাজসহ বিভিন্ন সৌখিন পণ্য। আর এ পণ্য চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাহিরেও।
ফাতেমা বেগম জানান, সুতা ও ঝুটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। তবে কোনো বিড়ম্বনা ছাড়াই স্বল্প সুদে ঋণ পেলে এ শিল্পে যুক্ত হয়ে বেকারত্ব ঘুচবে অনেকের। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি উৎসাহ পাবে তারা।
ফাতেমা বলেন, স্বামী ভারতে চলে যাওয়ার পরে আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। কিন্তু আমি হার মানি নাই। জীবন যুদ্ধে জয় পাওয়ার আশায় ঢাকায় চলে যাই। কাজ শিখে নিজ এলাকায় এসে নিজের এবং অন্য নারীদের উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করি। এখন আমি আমার জীবন যুদ্ধে সফল হয়েছি। আমি মনে করি নারীরা আর দুর্বল নয়, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এখন অনেক এগিয়ে গেছে।
কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, এ খাতের উন্নয়নে সরকারের নজর আর বিপণন ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং প্রশিক্ষণ আর কারিগরি সহায়তা দেয়া হলে এ শিল্পের প্রসার ঘটবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোর্শেদ আলী খান বলেন, অবহেলিত নারীদের জন্য ফাতেমা একটি দৃষ্টান্ত। নারীরা আর পিছিয়ে নেই এটা ফাতেমাকে দেখলেই বোঝা যায়। আমরা ফাতেমার পাশে আছি সব সময়। ফাতেমার কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো।
আরএআর/পিআর