ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কালো বলে বিয়ের রাতেই স্বপ্ন ভাঙে জয়িতা মিনির

প্রকাশিত: ০৪:২২ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৭

অন্য সব মেয়েদের মতোই তারও স্বপ্ন ছিল ছোট একটা সুখের ঘর-সংসার হবে। কপালে টিপ, হাতে-কানে গহনা, নাকে নাকফুল আর লাল শাড়ি পড়ে তাইতো স্বামীর ঘরে পা রেখেছিলেন নিজের ঘর ছেড়ে। স্বপ্ন ছিল স্বামী, সংসার নিয়ে দিন কাটানোর। কিন্তু কপালে সুখের দেখা মেলেনি।

কালো হওয়ার অপরাধে বাসর রাতেই স্বপ্ন ভাঙে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করে যে ‘নারী’ ক্যাটাগরীতে ২০১৫ সালে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার পাওয়া গোলাপী আক্তার মিনির।

রংপুর শহরের দক্ষিণ কামাড়পাড়ায় ভ্যানচালক আব্দুল গনির বড় মেয়ে গোলাপী আক্তার মিনি। অভাব-অনাটনের সংসারে পঞ্চম শ্রেণিতেই পড়ালেখার পাঠ চুকে যায় তার। ২০০৯ সালে আদর্শপাড়া এলাকার আলী নামে এক ভ্যানচালক যুবকের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা যৌতুকে বিয়ে হয় চৌদ্দ বছর বয়সী মিনির। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর দুই চোখ ভরা স্বপ্নের সেই রাতটা যেন মিনির কাছে হয়ে উঠে বিভীষিকাময় এক রাত। 

Nari

মিনি জাগো নিউজকে জানান, চোরের উপদ্রব আছে এমন অযুহাতে শাশুড়িসহ অন্য স্বজনরা মিলে ওই রাতেই তার শরীর থেকে খুলে নেন সব গহনা। দেখতে কালো হওয়ার গঞ্জনা নিয়ে রাতটা কাটলেও সকালে ফিরে যেতে হয় সেই বাবার ঘরেই হিজড়া অপবাদ নিয়ে। এরপর সময় গড়ায় কিন্তু তার আর ফিরে যাওয়া হয় না সেই স্বামীর ঘরে।

একপর্য়ায়ে বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস এর মানবাধিকার কর্মী বিলকিস বেগমের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার মাধ্যমে সেখানকার আলোকিত ভুবনে এক বছরের সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করেন। এরই মধ্যে বিয়ের সম্পর্কটা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তিনি হিজড়া না এটা প্রমাণ করতে মেডিকেল পরীক্ষাও করানো হয়। কিন্তু তবুও বিয়ে বিচ্ছেদ হয়।


Nari

মিনি জানান, প্রশিক্ষণ শেষে তাদের দেয়া সেলাই মেশিন নিয়ে বাড়িতেই কাজ শুরু করি। এরপর ২০১০ সালে যোগ দেই রংপুরের এক পোশাক কারখানায়। তিন হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু হলেও এখন প্রতি মাসে বেতন আর নিজের সেলাই মেশিন দিয়ে আয় হয় দশ হাজার টাকারও বেশি। ইতোমধ্যে ব্যাংকে ৬ লক্ষাধিক টাকা জমা রয়েছে। মা-বাবা, দুই ভাই ও এক বোনসহ কামারপাড়ায় টিনের চালা দিয়ে তৈরি ভাড়া বাসায় থাকেন বলে জানান তিনি।

মিনি আরও জানান, শ্রেষ্ঠ জয়িতা নারী অন্বেষণে ২০১৫ সালে রংপুর সদর উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নির্বাচিত হন। পরিবারের বড় মেয়ে হওয়ায় ইচ্ছে আছে অন্য সব ভাই-বোনদের পড়ালেখা শিখিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার। তার মতো অন্যদের জীবন যেন এ রকম না হয়। নিজেকেও প্রতিষ্ঠার অনেক দূরে নিয়ে যেতে চান। তাই মনে প্রাণে চালিয়ে যাচ্ছেন এ লড়াই।

এআরএ/জেআইএম

আরও পড়ুন