ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

দাকোপের ৩৪ পয়েন্টে নদী ভাঙন

প্রকাশিত: ০৫:৩৪ এএম, ০৯ এপ্রিল ২০১৫

খুলনার দাকোপের পৃথক তিনটি পোল্ডারের ৩৪টি পয়েন্টে ভয়াবহ নদী ভাঙনে লক্ষাধিক মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার বা বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা না হলে যেকোনো মুহূর্তে ভাঙন কবলিত স্থানগুলো নদী গর্ভে বিলীন হয়ে জনজীবনে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কারের জন্য উপজেলাবাসী পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভৌগোলিক কারণে দাকোপ উপজেলা মূলত বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত হওয়ার কারণে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে এ উপজেলাবাসীদের বাঁচতে হয়।

শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয়, ষাট-এর দশকের পূর্বে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধগুলো সমুদ্র তলদেশ অপেক্ষা পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত পরিকল্পনা সহকারে টেকসই ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। এতে করে একের পর এক নদী ভাঙনের কারণে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে এ সমুদ্র উপকূলীয় উপজেলাটি ছোট হয়ে আসছে।

প্রায়ই এ নদী ভাঙনের কারণে স্থানীয়দের বসতঘর বাড়ি, সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, গাছপালা এবং কৃষকের আমন ফসলের চাষাবাদযোগ্য জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে এখন ওয়াপদা বেড়িবাঁধের উপর ঝুপড়িঘর বেঁধে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। আবার কেউ কেউ জীবন জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ছোট ভাঙনে অল্প টাকা, আর বড় ভাঙনে বেশি টাকা এ নীতি পাউবোর কয়েকজন কর্মকর্তা অনুসরণ করায় ওই সকল ছোট ভাঙনগুলো আর সংস্কার করা হয় না। ফলে ওই সকল ছোট ছোট ভাঙনগুলো সংস্কার না হওয়ায় তা ক্রমান্বয়ে দীর্ঘ হয়ে বাঁধটি এক সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে এলাকা প্লাবিত হয়। নদী ভাঙনে সহায় সম্বল হারানো এ সকল অসহায় মানুষের মাঝে বর্ষা মৌসুম এলেই, তাদের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট, যেন মরার ওপর খরার ঘা।

তারা জানান, বর্তমানে উপজেলার পৃথক তিনটি পাউবোর পোল্ডারের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ নদী ভাঙন ও ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এ সকল নদী ভাঙনগুলোতে কার্যত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট পাউবোর কর্তৃপক্ষকে অবগত করালেও তারা কেউই এখনো পর্যন্ত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসেননি। এ সকল নদী ভাঙনগুলোতে দ্রুত সংস্কার করা না হলে আবারও আইলার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনায় আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন উপজেলাবাসী।

এদিকে কোনো নিম্নচাপ ছাড়াই এবং বর্ষা মৌসুম শুরু না হতে উপজেলার শিবসা, ঢাকি, ভদ্রা, পশুর, ঝপঝপিয়া, মাঙ্গা, মাদুরছড়া, নলিয়ান, চুনকুড়িসহ ছোট বড় কমপক্ষে ১০টি নদ-নদীতে স্বাভাবিক অপেক্ষা প্রায় ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্র উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার পৃথক তিনটি পোল্ডারের ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ১৮টি পয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙন ও ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এ ভয়াবহ নদী ভাঙনকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় এলাকার অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক লোক সম্পূর্ণভাবে আতঙ্কিত।

অনেক স্থানে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নদী ভাঙন কবলিত স্থানে ভাঙনের ঝুঁকি কমাতে দিন-রাত কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ ভাঙন কবলিত স্থান থেকে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও বসতঘর বাড়ি রক্ষার্থে অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, দাকোপের পৃথক তিনটি পোল্ডারে ভয়াবহ নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংক ৩২ এবং ৩৩ পোল্ডারের টেকসই ও মজবুত বেড়িবাঁধ সংস্কার করার দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে বিশ্ব ব্যাংক কাজ শুরু না করায় দু’টি পোল্ডারসহ ৩১নং পোল্ডারের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে।

এমজেড/বিএ/পিআর