ভাতা নিতে এসে দুর্ভোগে বয়স্করা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বয়স্ক ভাতা নিতে সোনালী ব্যাংকে এসে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বয়স্করা। ৬৫ থেকে ৭০ বয়সী বয়স্কদের ভাতা নেয়ার জন্য সিঁড়ি বেয়েই উঠতে হচ্ছে ছয়তলা পর্যন্ত। লিফট্ থাকলেও কিভাবে লিফট্-এ চড়তে হয় সেটি না জানায় সিঁড়ি বেয়ে ছয়তলায় উঠতে গিয়ে অনেকেই হাঁপিয়ে পড়েন। পাশাপাশি ভাতা নিতে এসে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে অনেকটা নারকীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে এসব বয়স্কদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের কুমারশীল মোড়স্থ বহুতল ভবন আমিন কমপ্লেক্সের দ্বিতীয়তলায় ২০০৪ সালের দিকে স্থানান্তরিত হয় সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রধান শাখাটি। এরপর দ্বিতীয়তলা থেকেই সব ধরনের ভাতা প্রদান করা হতো। তবে নানা ধরনের ভাতাভোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি ওই ভবনেরই ছয়তলার একটি অংশে ভাতা প্রদানের জায়গা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন তাতেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না।
প্রধান শাখা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষকে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়। বয়স্ক ভাতা ছাড়াও ব্যাংকের এই শাখা থেকে মুক্তিযোদ্ধা, মাতৃত্ব, বিধবা, প্রতিবন্ধী, দলিত হিজড়া ও ঋষিদের ভাতা প্রদান করা হয়। এসব ভাতাভোগীর সংখ্যাও হাজার তিনেক।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সকল ওয়ার্ড ও নাটাই এবং রামরাইল ইউনিয়নের ভাতাভোগীদের মাঝে ভাতা প্রদান কার্যক্রম। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ছিল ভাতা প্রদানের শেষ দিন। প্রচণ্ড ভীড়ের কারণে গত ২-৩ দিন ধরে একনাগাড়ে এসেও ভাতা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেননি অনেকেই।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সরজমিনে ব্যাংকের ছয়তলায় ভাতা প্রদানস্থলে গিয়ে দেখা গেছে ভাতাভোগীদের উপচেপড়া ভীড়। ভেতরে প্রচণ্ড গরমে ভাতাভোগীদের প্রায় সিদ্ধ হওয়ার অবস্থা। ভাতার অপেক্ষায় নিচতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত সিঁড়িতেই বসে আছেন অসংখ্য বৃদ্ধ নারী-পুরুষ।
দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়েছেন, অনেকে আবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ভাতা পাননি। ভাতা নিতে এসে যেন জীবন নিয়ে টানাটানিতে পড়েছেন এসব ভাতাভোগীরা।
গত সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরেও বয়স্কভাতা নিতে এসে সিঁড়ি বেয়ে পাঁচতলায় উঠে অচেতন হয়ে পড়েন জেলা সদরের রামরাইল ইউনিয়নের বাসিন্দা বাসনা বেগম (৭০)। পরে মাথায় পানি ঢালার পর চেতনা ফিরে আসে তার।
এদিকে, ভাতাভোগীদের উপচেপড়া ভীড়ের কারণে গত ২-৩ দিন একনাগাড়ে এসেও ভাতা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেননি অনেকেই। সকালে এসে দুপুরেও বই জমা করতে কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারেননি। এ অবস্থাই চলছে সোনালী ব্যাংকের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রধান শাখা। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব ছাড়াও ভাতাভোগীরা সবাই একদিনে চলে আসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ভাতাভোগীদের জন্য আমরা ছয়তলা ভাড়া করেছি। সেখানে তাদের জন্য বসার জায়গাও রাখা হয়েছে। তাছাড়া কোন এলাকার ভাতা কোনদিন প্রদান করা হবে এর জন্য তারিখও নির্ধারিত করা হয়েছে। কিন্তু তারিখ না মেনে সবাই একদিনে চলে আসেন বলে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
তিনি আরও বলেন, আগের তুলনায় ভাতাভোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা রাত ৯-১০টা পর্যন্ত ভাতা প্রদান করেও কুলাতে পারছি না। শুধুমাত্র ব্যাংকের গ্রাহকদের জন্য আলাদাভাবে লাগানো আরেকটি লিফট্ ২-১ দিনের মধ্যেই চালু হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/পিআর