বৃষ্টিতে বিঘ্ন কক্সবাজারের লবণ উৎপাদন
গত পাঁচ দিন ধরে কক্সবাজারে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে জেলায় দেড় লাখ মেট্রিকটন লবণ কম উৎপাদন হয়েছে। এতে পাঁচ দিনে অন্তত পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বিসিক কক্সবাজার অফিসের উচ্চমান সহকারী মো.তাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ৩১ মার্চ থেকে পাঁচ দিন বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। স্থানভেদে ৫ থেকে ৫২ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় লবণ উৎপাদনে ক্ষতি হয়েছে। বৈরী হাওয়া অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। সূত্র জানায়, ‘শিল্প লবণ ও ক্যামিক্যাল লবণ’ অজুহাতে দেশের বাইর থেকে থেকে লবণ আমদানি করছে একটি চক্র। তাদের কারণে দেশীয় লবণের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেনা চাষিরা।
মিলাররাও সঠিক দামে লবণ কিনতে চাইছেননা। দালাল-ফঁড়িয়াদের হাতে জিম্মি হয়ে গেছে লবণ শিল্প। এর উপর ভর করেছে প্রাকৃতিক বৈরী হাওয়া। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছে জেলার অর্ধ লাখ লবণ চাষি। বিসিক সূত্র জানায়, দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে ১৬ লক্ষ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। ইতিমধ্যেই ৯ লক্ষ ৭২ হাজার ৫০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে।
জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর উপজেলার ১৩টি কেন্দ্রের অধীনে ৬৪ হাজার ১৫১ একর জমিতে চলতি মৌসুমে লবণের চাষ হচ্ছে। নভেম্বর থেকে মে এই ৬ মাস লবণ উৎপাদনের সময়। জেলায় লবণ চাষি রয়েছে ৪২ হাজার ৪৮৪ জন।
কক্সবাজার সদরের গোমাতলির লবণ চাষি আতিকুর রহমান জানান, বৃষ্টির কারণে মাঠের অধিকাংশ লবণই পানির সাথে মিশে গেছে। এতে তার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। কুতুবদিয়ার লেমশাখালীর লবণ চাষি নুরুল ইসলাম জানান, অনেক চাষির লবণ তুলতে না পারায় লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। এখনো মাঠে নামা অনিশ্চিত। বৃষ্টির কারণে আরও ১০-১৫ দিন পর্যন্ত মাঠ থেকে লবণ উৎপাদন হবেনা বলে জানান তিনি।
কুতুবদিয়ার লেমশখালীর প্রান্তিক লবণ চাষি শামসুল আলম জানান, তিনি এ মৌসুমে ৮ একর জমিতে লবণ চাষ করেছেন। এতে এ পর্যন্ত ৪ হাজার মণ লবণ উৎপাদিত হয়েছে। তবে উৎপাদনের জন্য যে খরচ পড়েছে বাজার দর তার চেয়ে অনেক কম।
মহেশখালীর কালারমারছড়ার মঞ্জুর আলম জানান, এক কানি জমিতে এক মণ লবণ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ১৩০ টাকা। অথচ বাজারে বর্তমানে লবণ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়।
কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরের লবণ চাষি ফরিদুল আলম জানান, লবনের মণ প্রতি লোকসান গুণতে হচ্ছে ৩০ টাকা। এভাবে বাজার মূল্য কমলে লবণ চাষ বন্ধ করে দিতে হবে।
কক্সবাজার লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও লবণ শিল্প এলাকা ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুল কাদের জাগো নিউজকে জানান, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সরকারের উচ্চ মহলে ভুল তথ্য দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে। দেশের লবণ শিল্প ও ক্ষুদ্র চাষিদের রক্ষা করতে হলে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে। সরকারের ঘোষিত দামে লবণ কিনলে প্রান্তিক চাষিরা বাঁচবে।
তিনি আরো বলেন, ক্যামিকেলের নামে লবণ আমদানি হচ্ছে। ভেকোয়াম এভাপোরেশন সল্ট মালিকেরা এতে জড়িত। নেপথ্যে থেকে তারা সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। দেশের বাইরে থেকে লবণ আমদানির কারণে দেশীয় লবণ শিল্প মার খাচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিসিক কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল লতিফ জাগো নিউজকে জানান, হঠাৎ বৃষ্টির কারণে দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন কমেছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমজেড/আরআইপি