পাবনায় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মবার্ষিকী পালন
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সোমবার পাবনায় পালন করা হলো বাংলা চলচ্চিত্রের প্রয়াত মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী। সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, পাবনা দুপুরে প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজনের মধ্যে ছিল কেক কাটা এবং আলোচনা সভা।
পরিষদের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. রামদুলাল ভৌমিক। সুচিত্রা সেনের জীবনীর উপর আলোচনায় অংশ নেন, লেখক গবেষক ড. এম আবদুল আলীম, সুচিত্রার স্মৃতি বিজরিত স্কুল পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মেহের সুলতানা, পাবনা টাউন গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রবিউল করিম, প্রেসক্লাবের সম্পাদক আহমেদ উল হক রানা সহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, সুচিত্রা সেন শুধু পাবনা নয়, সারা বাংলাদেশ তথা বাঙালির গর্ব। তার আদর্শ অনুকরণীয় হয়ে থাকবে নতুন প্রজন্মের কাছে। একইসাথে পাবনার কোন একটি স্থান বা প্রতিষ্ঠানের নাম সুচিত্রার নামে নামকরণ ও সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজে নাট্যকলা বিভাগ চালুর দাবি জানান তারা।
বক্তারা উদ্ধারকৃত সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়িতে স্মৃতি সংগ্রহশালা করার কাজে ধীরগতি হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, সবার প্রত্যাশা সরকার দ্রুত বিষয়টি বাস্তবায়ন করবেন। পরে সুচিত্রা সেনের ৮৪তম জন্মবার্ষিকীর কেক কাটেন অতিথিরা।
পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেনকে নিয়ে পাবনাবাসীর গর্বের শেষ নেই। পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের তাঁর পৈত্রিক বাড়িটি এখনো পাবনাবাসীর চেতনায় যেন শান দেয়। তিনি আজ ইহধাম ত্যাগ করে চলে গেলেও রয়েছেন এ জনপদের মনের মনিকোঠায়। তাইতো তার জন্মদিন পালন করে থাকে বারবার।
পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়াকালিন সুচিত্রা সেন বা রমাদির বিয়ে হলে ভারতে চলে যান। এর কিছুদিন পরে তার বাবার সঙ্গে পুরো পরিবার চলে যান ভারতে। রমাদি ভারতে চলে যাওয়ার পর পরবর্তি সময়ে তার পৈত্রিক বাড়িটি সরকারের অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়। কিছুদিন এই বাড়িতে সরকারি লোকজন বসবাস করত। পরে ১৯৮৭ সালে পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার ০.২১২৫ একর জমির উপর নির্মিত বাড়িটি জামায়াত পরিচালিত ইমাম গাযযালী ইনষ্টিটিউট নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়া হয়। সর্বস্তরের মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১২ জুন পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ঐ লিজ বাতিল করা হলে ঐ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের আইনি লড়াই শুরু হয়।
একই বছরের ২২ জুন জেলা প্রশাসনের নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে ইমাম গাজ্জালি ট্রাষ্ট। এরপর ২০১১ সালে এ রিট খারিজ এবং বাড়িটি দখলমুক্ত করে সেখানে সূচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা করতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এই আইনি লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত বছরের ৪ মে লিভ টু আপিল খারিজ করে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৬ জুলাই উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি জেলা প্রশাসনের কাছে আসে এবং পাবনাবাসীর প্রিয় সন্তান, প্রিয় নায়িকার বাড়িটি দখলমুক্ত করার সব আইনি বাঁধা অপসারিত হয় এবং বাড়িটি জামায়াত পরিচালিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দখলমুক্ত হওয়ার পর জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এর দখল বুঝে নেয়।
এমজেড/আরআর