মেয়রের ভাই মিন্টুর হাতেও ছিল শটগান
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর মেয়র গ্রুপের সঙ্গে ছাত্রলীগের একাংশের সংঘর্ষ চলাকালে মেয়র হালিমুল হক মীরুর ভাই হাবিবুল হক মিন্টুকে শটগান নিয়ে গুলি করতে করতে দৌড়াতে দেখা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মিরুর বাড়ির সামনে এ সংঘর্ষ চলাকালে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল আহত হন। পরদিন শুক্রবার ঢাকায় নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
মেয়র মীরু সংঘর্ষের সময় গুলি করেছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন। সংঘর্ষের সময়ের ভিডিও চিত্রটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারও হয়। প্রচারিত ওই ভিডিওতে মেয়র হালিমুল হক মীরু ও তার ভাই মিন্টুর হাতে শটগান দেখা যায়। ভিডিওটি নিয়ে এখন সিরাজগঞ্জ জেলাসহ দেশজুড়ে ঝড় ওঠে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদের সমর্থকরা লাঠিসোটা নিয়ে মেয়রের বাড়ির সামনে এলে দুইপক্ষের মাঝখানে থেকে পুলিশ তাদের হটানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে বিজয়ের সমর্থকরা পিছু হটে যাওয়ার সময় পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মেয়রের সমর্থক বেশ কয়েকজন লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়াকারীদের পিছনের সাদা ফুল শার্ট ও নেভি ব্লু রংয়ের প্যান্ট পড়ে শটগান হাতে গুলি করতে করতে প্রতিপক্ষের দিকে এগিয়ে যান মিন্টু।
এসময় মিন্টুকে ডাকতে ডাকতে বাম হাতে শটগান নিয়ে পিছন পিছন ছুটে যান মেয়র মীরু। কিছুক্ষণ পর গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক শিমুলকে ধরাধরি করে নিয়ে আসতে কয়েকজনকে দেখা যায়। আরও কিছুক্ষণ পর বাম হাতে শটগান নিয়ে বাড়ির সামনে ফিরে আসতে দেখা যায় মিন্টুকে।
এরপর একই রাস্তার বিপরীত দিকে থাকা প্রতিপক্ষ লোকজনকে ধাওয়া করার জন্য বেশ কয়েকজন এগিয়ে যায়। তাদের মাঝে মেয়রকেও বাম হাতে শটগান নিয়ে এগিয়ে যেতে দেখা যায়।
এ ঘটনার পরদিন মিন্টুকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তার ব্যবহৃত শটগানটি উদ্ধার হয়নি। তবে মেয়রের ব্যবহৃত শটগান ও বেশকিছু গুলি জব্দ করেছে পুলিশ।
এ মামলার প্রধান আসামি মেয়র হালিমুল হক মীরুকে রোববার রাতে পুলিশ রাজধানীর শ্যামলী এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে।
মীরুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় শাহজাদপুর আমলী আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। পরে বিকেলে বিচারিক হাকিম হাসিবুল আমলী নিয়ে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেন।
শিমুলের স্ত্রীর করার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জানান, মেয়রের বাড়িতে হামলা ও উভয়পক্ষের সংঘর্ষের একাধিক ভিডিও চিত্র ও স্টিল ছবি আমরা সংগ্রহ করেছি। সেখানে আরও কী কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি সেগুলো উদ্ধারে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। তবে এখনও মেয়রের শটগান ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান।
এদিকে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, মীরুর পরিবারের সদস্যরা অনেকেই এখনও জাসদের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তার দুই ভাইয়ের মধ্যে হাবিবুল হক মিন্টু পাবনা জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। মেয়র মীরুর দুই ভাইয়ের নামেই পাবনার একটি থানায় মাদক মামলা রয়েছে। আর মিন্টুর ঘনিষ্ঠ সহচর মো. নিস্তার হোসেনের নামে আছে হত্যাসহ ১৪টি মামলা।
শাহজাদপুরে আধিপত্য বিস্তার করতে মাঝে মধ্যেই এই নিস্তারকে শাহজাদপুরে ডেকে আনতো মিন্টু ও পিন্টু। ২০১৬ সালের পৌর নির্বাচনের সময় তার বাহিনীই শাহজাদপুরে তাণ্ডব চালিয়েছিল।
পৌর নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম। তিনি দাবি করে বলেন, গত পৌর নির্বাচন ছিল শাহজাদপুরের ইতিহাসে সবচেয়ে সহিংস নির্বাচন। নির্বাচনের আগে থেকে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে মীরু, তার ভাই ও তার সমর্থকেরা।
এআরএ/