অস্ত্র দিয়েই ক্ষমতা চালাবো, কোনো কর্মীর প্রয়োজন নেই
হালিমুল হক মীরু। একাধারে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র। দুইয়ে মিলে তার অবস্থান ছিল পোয়াবারো।
নিজস্ব বলয় তৈরি করে সবসময় এলাকায় তার বাহিনী নিয়ে দাপট দেখাতেন। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেতো না। কেউ প্রতিবাদ করলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিতো।
যার সর্বশেষ প্রমাণ শাহজাদপুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি বিজয় মাহমুদ। পৌরসভার নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়র তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে বেদম মারপিট করে হাত-পা ভেঙে দেয়।
এ সময় বিজয়ের পাশে মীরুর অপরিচিত সন্ত্রাসী অবৈধ পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরে বিজয়কে রিকশায় তুলে পথিমধ্যে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। বর্তমানে বিজয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা এখনও শংকটাপন্ন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে মেয়র মীরু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। মেয়র নির্বাচনের আগ থেকে তার বাড়িতে ২৫-৩০ জনের একজন সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। এর বেশির ভাগ সন্ত্রাসী অন্য জেলার। তাদের কাছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। সন্ত্রাসী দলের নেতৃত্বে ছিল তার দুই ভাই পিন্টু ও মিন্টু। হাসিবুল হক মিন্টু পাবনা জেলার জাসদের সাধারণ সম্পাদক।
সন্ত্রাসী দলটি গত শুক্রবার পর্যন্ত মেয়রের বাসায় অবস্থান করছিল। বড় ভাই মেয়র হওয়ায় পৌরসভার টেন্ডার পিন্টু ও মিন্টুই নিয়ন্ত্রণ করতো। উন্নয়নের নামে কাজের কাজ কিছুই হতো না। ঠিকাদার দায়সারা কাজ দেখিয়ে লুটে নিতো টাকা। ফলে এসব উন্নয়ন থেকে পৌরবাসী কোনো সুফল পেতো না।
মেয়রের ওপর শুধু সরকারের একজন দায়িত্ব ছিল ব্যক্তির নয়, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আরও দু-একজনের আশীর্বাদও ছিল। যে কারণে অনেক বাধার মুখেও তিনি মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পান। ফলে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনকে তিনি কোনো গুরুত্বই দিতেন না।
জানা গেছে, মেয়র নির্বাচন করেছেন মীরু তার নিজস্ব স্টাইলে ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে। যে কারণে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর নিজেকে জনপ্রতিনিধি বা মেয়র মনে করতেন না। তার নিজস্ব গড়ে তোলা বাহিনী দিয়ে পৌরসভার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলকে বৃহস্পতিবার বিকেলে মেয়র হালিমুল হক মীরু সরাসরি গুলি করেও তিনি অনুশোচনা করেননি।
শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মীরুর বাড়ি ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি মেয়রকে গুলি করতে নিষেধ করেছি। কিন্তু তিনি শোনেননি। গুলিতে সাংবাদিক আহত হওয়ায় মেয়রের শটগান ও গুলি পুলিশ জব্দ করে।
এ সময় পুলিশ তাকে আটক করতে পারত কিন্তু তাও করেনি। এর কোনো উত্তর মেলেনি। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মেয়র মীরু তার মনিরামপুর বাড়িতে ছিলেন। অনেক সাংবাদিকের সাথে তিনি কথা বলেছেন।
এ সময় তার ভাব এমন ছিল, যেন কিছুই হয়নি। দুপুরের পর সাংবাদিক শিমুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মেয়র ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী শাহজাদপুর উপজেলা থেকে সটকে পড়ে।
২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর মেয়র মীরুর নিজ গ্রাম নলুয়াতে আঁখি খাতুন নামে একটি গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করেছিলেন মেয়রের এক কর্মী। মামলাটি মীমাংসার জন্য মেয়র ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। যে কারণে কোনো মামলা হয়নি। ৩২ ঘণ্টা পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফন করা হয়। অনেক অপরাধ করলেও মেয়র মীরু কোনো সময় জেলে যাননি।
হালিমুল হক মীরু দলে থেকে কারোর উপকার করেছেন এমন নজির বা এমন একথা কেউ বলতে পারেননি। মেয়র মীরু তার দুই ভাই পিন্টু ও মিন্টু ছাড়া কোনো কাজই করতেন না। সব কাজ তাদের সঙ্গে নিয়ে করতেন। তাদের কথার বাইরে মেয়র চলতেন না।
এবার মেয়র হয়ে হালিমুল হক মীরু অফিসে বসে ঘোষণা দেন, ‘আমি সন্ত্রাস করে অস্ত্র দিয়ে ভোট নিয়ে মেয়র হয়েছি। অস্ত্র দিয়েই আমি পৌরসভার ক্ষমতা চালাবো। আমার কোনো কর্মীর প্রয়োজন নেই।’
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এএম/জেআইএম